গাজায় চলেছে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি

গাজায় শুরু হয়েছে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি। তবে সোমবারের মতো একতরফা নয়, এই যুদ্ধবিরতিতে সায় দিয়েছে হামাস, ইজরায়েল— দু’পক্ষই। এ বারের প্রস্তাবটি এসেছে মিশরের থেকে। এটি মিশরের তৃতীয় প্রস্তাব। এর আগে দু’বার মিশরের প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও তা মূলত হামাসের আপত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য কায়রোতে আলোচনা চলছে। প্যালেস্তাইনের সব পক্ষের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দিয়েছেন। এরই পাশাপাশি, ইজরায়েল নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়েছেন ব্রিটেনের মন্ত্রী সৈয়দ ওয়ারশি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৪ ১৮:২৪
Share:

ফেরার পালা। কিন্তু ঘর কই!

গাজায় শুরু হয়েছে ৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি। তবে সোমবারের মতো একতরফা নয়, এই যুদ্ধবিরতিতে সায় দিয়েছে হামাস, ইজরায়েল— দু’পক্ষই। এ বারের প্রস্তাবটি এসেছে মিশরের থেকে। এটি মিশরের তৃতীয় প্রস্তাব। এর আগে দু’বার মিশরের প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি শুরু হলেও তা মূলত হামাসের আপত্তিতে দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী শান্তির জন্য কায়রোতে আলোচনা চলছে। প্যালেস্তাইনের সব পক্ষের প্রতিনিধিরা এতে যোগ দিয়েছেন। এরই পাশাপাশি, ইজরায়েল নিয়ে রাষ্ট্রীয় নীতির প্রতিবাদে ইস্তফা দিয়েছেন ব্রিটেনের মন্ত্রী সৈয়দ ওয়ারশি।

Advertisement

সোমবার ইজরায়েলের ডাকা একতরফা যুদ্ধবিরতি সফল হয়নি। ইজরায়েলি আক্রমণে বেশ কয়েক জনের প্রাণও গিয়েছে। মঙ্গলবার ইজরায়েলি সেনা ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে জানিয়েছে, তাদের গাজায় স্থল অভিযানের লক্ষ্যপূরণ হয়েছে। হামাসের ৩২টি সুড়ঙ্গ ধ্বংস করা হয়েছে। ধ্বংস করা গিয়েছে ৩০০০ রকেটও। কাজ শেষ হওয়ায় গাজা থেকে সেনা সরিয়ে আনা হয়েছে। গাজার সীমানার বাইরে প্রতিরক্ষাব্যূহ গঠন করে ইজরায়েলি সেনা অবস্থান করছে। এই অভিযানে ইজরায়েলের ৬৪ জন সেনা মারা গিয়েছে। হামাসের কোনও সুড়ঙ্গ এখনও ধ্বংস করা বাকি থাকলে তারও খোঁজ করবে ইজরায়েলি সেনা।

এর আগে দু’বার মিশরের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সফল হয়নি। মূলত হামাস আপত্তি করেছিল। এ বারের যুদ্ধবিরতির আগে প্যালেস্তাইনের সব পক্ষের (হামাস, ফাতহ্ ও ইসলামিক জিহাদ) প্রতিনিধিরা কায়রো গিয়ে আলোচনায় বসেন। সঙ্গে যোগ দেন কাতার ও তুরস্কের প্রতিনিধিরাও। এই যুদ্ধবিরতি দীর্ঘস্থায়ী হলে ইজরায়েলের এক প্রতিনিধি দলের কায়রো যাওয়ার কথা। সেখানে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির বিষয়ে আলোচনা হওয়ার কথা। শান্তির সুযোগে গাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। রাস্তায় মানুষজন বেরোতে শুরু করেছেন। ঘরছাড়ারা ধীরে ধীরে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। তবে অনেকেরই ঘর বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। শহরের এক বড় অংশ কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। নিকাশি ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ-সহ নাগরিক পরিকাঠামোর শোচনীয় অবস্থা। বিশেষজ্ঞদের মতে গাজার পুনর্গঠনের জন্য প্রায় ৬০০ কোটি ডলার প্রয়োজন। আর এই হামলা চালাতে ইজরায়েলের ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ কোটি ডলার।

Advertisement

জীবনের ছন্দে।

তবে এই অঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি ফেরানো কঠিন। কারণ, ইজরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের পাশাপাশি গাজা থেকে সব ধরনের অবরোধ তুলে নেওয়ার দাবি করেছে হামাস। তা ছাড়া, ইজরায়েলকে ধ্বংস করার অঙ্গীকার থেকে সরে আসতে রাজি নয় হামাস। অন্য দিকে, ইজরায়েলও গাজাকে সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত করার দাবিতে অনড়। শান্তি কতটা কঠিন তা বোঝা যায় এ বারে যুদ্ধবিরতির কিছু ক্ষণ আগেই। সেই সময়েই হামাস ইজরায়েলকে লক্ষ করে ১৭টি রকেট ছোড়ে। একটি রকেট ইজরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্রধ্বংসী ব্যবস্থা ‘আয়রন ডোম’ ধ্বংস করে। বাকি রকেটগুলি জেরুজালেম, বেথলেহেম-এর কাছে আঘাত হানে। এতে কোনও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার আগে হামলার আশঙ্কায় ইজরায়েলের তেল আভিভের আকাশপথে বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়। বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বিমান ওঠা-নামা বন্ধ থাকে। পাল্টা আঘাত হানে ইজরায়েলও। তবে এই হামলায়ও এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনও খবর মেলেনি।

২৯ দিনের এই সংঘর্ষে এখনও পর্যন্ত ১৮৫৬ জন প্যালেস্তাইনির প্রাণ গিয়েছে। এর মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ সাধারণ নাগরিক। এই হত্যার জন্য ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তুলে বিচার চাইতে প্যালেস্তাইনের বিদেশমন্ত্রী রিয়াদ আল-মালিকি হেগ-এর আন্তর্জাতিক আদালতে আবেদন করতে গিয়েছেন। যদিও ইজরায়েলের দাবি, হামাস গাজার বাসিন্দাদের ‘হিউম্যান শিল্ড’ হিসেবে ব্যবহার করেছে। জনবহুল এলাকায় অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছে তারা। জনবহুল এলাকা থেকে আক্রমণ চালায় হামাস। দাবির সমর্থনে ইজরায়েলি সেনা নিজেদের ট্যুইটার অ্যাকাউন্টে হামাসের একটি প্রশিক্ষণের দলিল প্রকাশ করেছে। যেখানে সাধারণ নাগরিকদের কী ভাবে যুদ্ধে ব্যবহার করা যায় তার নির্দেশ লেখা আছে বলে ইজরায়েলের অভিযোগ।

ছবি: এএফপি

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement