করমর্দনে ব্যস্ত মোদী। ছবি: পিটিআই।
দা শিং শান মন্দির দেখে সবে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। চোখে পড়ল, জনতার ভিড়। তারা হাত মেলাতে চাইছে তাঁর সঙ্গে। চোখে তাদের খুশির ঝিলিক। আর মুখে তাঁর-ই নাম! জনতার ভিড় থেকে মাঝে মাঝেই শোনা যাচ্ছে, ‘মোদী, মোদী’! তাদের উচ্ছ্বাস ঠেকাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে নিরাপত্তারক্ষীদের। সফরের শুরুতেই এমন আন্তরিকতা নিঃসন্দেহে মুগ্ধ করার মতো!
দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক শান্তি বজায় রাখার বার্তা নিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে চিনের শি আন শহরে এসে পৌঁছেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে শিয়াংইয়াং বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান শানঝি প্রদেশের গভর্নর। সেই শি আন শহরে, যার নামের অর্থই চিরন্তন শান্তি। তবে শান্তির শহরে মোদীর আস্তিনে রয়েছে কূটনীতির তাসও! গত বছরের সেপ্টেম্বরে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ভারতে এসে প্রথম বৈঠকটি করেছিলেন তাঁর শহর আমদাবাদে। সৌজন্য বিনিময়ে তাই পিছিয়ে রইলেন না ভারতের প্রধানমন্ত্রীও। তিন দিনের চিন সফরের শুরুটাই করলেন চিনা প্রেসিডেন্টের জন্মশহর দিয়ে!
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই প্রথম চিনে পা রাখলেন মোদী। স্বাভাবিক ভাবেই তাঁর চোখ রয়েছে সফর সার্থক করার দিকে। সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সমস্যা চলছেই। সমস্যা চলছে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরে চিনা উপস্থিতি নিয়েও। তবে কোনও কিছু নিয়েই অন্তত প্রকাশ্যে উদ্বিগ্ন নন মোদী। বরং বলছেন, “যে শহরের সঙ্গে হিউয়েন সাংয়ের নাম জড়িয়ে আছে, তা খুব ভাল করে ঘুরে দেখতে চাই!”
শিয়াংইয়াং বিমানবন্দরে মোদীকে অভ্যর্থনা। ছবি: পিটিআই।
আর রাজনীতি? বাদ যাচ্ছে না তা-ও! বুধবারই মোদী জানিয়েছেন যে এই চিন সফর নিয়ে তিনি রীতিমতো আশাবাদী। জানিয়েছেন, এই সফরের মাধ্যমে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং তা এশিয়া ও অন্যান্য উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের জন্য ঐতিহাসিক হয়ে থাকবে।
কথা আছে, শুক্রবার বিকেলে প্রায় পাঁচ ঘণ্টার একটি বৈঠকে বসবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী আর চিনের প্রেসিডেন্ট। সেখানেই কথা হবে সিল্ক রুট নিয়ে। ঝালিয়ে নেওয়া হবে ভারত আর চিনের বাণিজ্যিক সম্পর্ক। মোদির এ সফরে চিন-ভারত বাণিজ্য বৈষম্যের বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ২০১৪-’১৫ অর্থবছরে চিনের সঙ্গে দেশের বাণিজ্য ঘাটতি ৩৪ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নিয়ে চিনা প্রেসিডেন্টের কাছে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানাবেন মোদি। এ ছাড়া চিনের মেরিটাইম সিল্ক রুট নিয়েও উদ্বিগ্ন ভারত। কথা হবে সেই সমস্যা নিয়েও।
এর পর মোদীর সঙ্গে বৌদ্ধ ভিক্ষু হিউয়েন সাংয়ের স্মৃতিতে নির্মিত ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডায় যাবেন চিনা প্রেসিডেন্ট। শুক্রবার থেকে বেজিংয়ে অন্য চিনা নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করবেন মোদী। সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাষণও দেবেন তিনি। সফরের শেষ দিন, শনিবার সাংহাইয়ে বৈঠক রয়েছে শিল্পপতিদের সঙ্গে।