সম্পাদকীয় ২

নীতি নহে, কূটনীতি

কো নও ঘটনাকে জয় হিসাবে দেখা হইবে, না পরাজয়, তাহা একান্ত ভাবেই দৃষ্টিকোণের উপর নির্ভর করে। পরমাণু প্রসার রোধে ইরানের সহিত বিশ্বের ছয়টি শক্তিধর রাষ্ট্র চুক্তিবদ্ধ হইতে সম্মত হইয়াছে, দফায়-দফায় দীর্ঘ আলোচনা, তুমুল দরকষাকষির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতিনিধিরা সুইটজারল্যান্ডে ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সহিত ঐকমত্যে পৌঁছাইয়াছেন যে, পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটি পরমাণু শক্তিকে জ্বালানির প্রয়োজনে ব্যবহার করিতে পারিলেও মারণাস্ত্র বানাইবার কাজে ব্যবহার করিবে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০০
Share:

কো নও ঘটনাকে জয় হিসাবে দেখা হইবে, না পরাজয়, তাহা একান্ত ভাবেই দৃষ্টিকোণের উপর নির্ভর করে। পরমাণু প্রসার রোধে ইরানের সহিত বিশ্বের ছয়টি শক্তিধর রাষ্ট্র চুক্তিবদ্ধ হইতে সম্মত হইয়াছে, দফায়-দফায় দীর্ঘ আলোচনা, তুমুল দরকষাকষির পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চিন, ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির প্রতিনিধিরা সুইটজারল্যান্ডে ইরানের বিদেশমন্ত্রীর সহিত ঐকমত্যে পৌঁছাইয়াছেন যে, পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটি পরমাণু শক্তিকে জ্বালানির প্রয়োজনে ব্যবহার করিতে পারিলেও মারণাস্ত্র বানাইবার কাজে ব্যবহার করিবে না। ইরান যে পরমাণু জ্বালানি প্রস্তুত করার উদ্যোগের নেপথ্যে গোপনে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম ও প্লুটোনিয়ামের সাহায্যে বোমা তৈয়ারির দিকে অগ্রসর হইতেছে, এমন সন্দেহ হইতেই পশ্চিমী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলি এবং নিরাপত্তা পরিষদের অন্য শক্তিধর সদস্যরা তাহার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল। এই নিষেধাজ্ঞার চাপই শেষ পর্যন্ত ইরানের শীর্ষ আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইকে নতি স্বীকারে বাধ্য করিয়াছে। ইরান তাহার পরমাণু প্রকল্পগুলির উপর কড়া আন্তর্জাতিক নজরদারির প্রস্তাবিত বন্দোবস্তটি শিরোধার্য করিয়া লইয়াছে। পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি এই ঘটনার এই নূতন বাঁকে আনন্দ প্রকাশ করিয়াছেন। তাঁহাদের নিকট ইরানের সহিত এমন বোঝাপড়া কূটনৈতিক জয়েরই নামান্তর। এ দিকে পশ্চিমে চুক্তির বিরোধীরা ইহাকে ইরানের কাছে পাশ্চাত্যের পরাজয় রূপেই বিবৃত করিতে ব্যস্ত।

Advertisement

কড়া নজরদারির ফাঁক গলিয়া আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের পর্যবেক্ষক ও প্রহরীদের বোকা বানাইয়া বোমা তৈরির প্রয়াস ইরান ঠিকই জারি রাখিবে, এমন সন্দেহ কেবল ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বিনিয়ামিন নেতানিয়াহু একাই ব্যক্ত করেন নাই, মার্কিন রিপাবলিকান সেনেটররাও একই ধরনের সংশয় প্রকাশ করিয়াছেন। পশ্চিম এশিয়ায় সৌদি আরব সহ সুন্নিপ্রধান আরব রাষ্ট্রগুলিও শিয়া ইরানের প্রতি তাহাদের বিরূপতাবশত প্রস্তাবিত চুক্তির তীব্র বিরোধিতা করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এই সংশয়বাদীদের বুঝাইতে যথেষ্ট বেগ পাইতে হইতেছে। রিপাবলিকান সেনেটররা তো ইতিপূর্বে হুমকি দিয়াই রাখিয়াছিলেন যে, ভবিষ্যতের রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট এই চুক্তিতে ওয়াশিংটনের দায়বদ্ধতা ঝাড়িয়া ফেলিতে পারেন। ওবামাকে তাই মার্কিন জনপ্রতিনিধিসভায় দীর্ঘ সময় ধরিয়া চুক্তির সারবত্তা বুঝাইতে হইয়াছে।

কিন্তু পশ্চিমী গণতন্ত্রের তরফে একা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তির প্রতি দায়বদ্ধ, এমন নয়, সেই সঙ্গে নিরাপত্তা পরিষদের চার স্থায়ী সদস্যও চুক্তিতে স্বাক্ষর করিবে। তা ছাড়া চুক্তির জন্য প্রভূত উদ্যোগ লইয়াছে জার্মানিও। তাই ইহা কেবল বারাক ওবামার ব্যক্তিগত ‘ইরান-প্রীতি’র ব্যাপার নয়। ইরানকে যে জর্জ বুশ কথিত ‘শয়তানি অক্ষ’-র বাহিরে আনিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতির মূল ধারায় শামিল করা যাইতেছে, তাহার দীর্ঘমেয়াদি তাৎপর্য উপলব্ধি করা দরকার। ইরান যে উত্তর কোরিয়া নয়, এই উপলব্ধিটাও জরুরি। প্রশ্নটি এখানে নৈতিকতার নয়, একটি ইসলামি রাষ্ট্রকে একঘরে করিয়া সেখানে জেহাদি সন্ত্রাসের বীজ অঙ্কুরিত হইতে দিবার পরিবর্তে তাহাকে আন্তর্জাতিক রাজনীতি, কূটনীতি ও আর্থ-বাণিজ্যিক কাঠামোর অন্তর্ভুক্ত করিয়া লওয়ার। সেই লক্ষ্যে চুক্তিটি বহু দূর অগ্রসর হইতে পারে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement