সম্পাদকীয় ২

জোর যাহার

পাঁচ বছর আগে দিল্লি সফরে আসিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন বলিয়াছিলেন যে, সংস্কার-উত্তর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে তিনি ভারতকে স্থায়ী সদস্য হিসাবে দেখিতে চাহেন, তখন চিনের এক পত্রিকা লিখিয়াছিল, ‘ভারতীয়দের মন ভুলাইতে ওবামা যে চেক দিয়া গিয়াছেন, তাহা ভাঙাইতে ভারতকে বেগ পাইতে হবে।’ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার লইয়া সম্প্রতি আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন সেই আশঙ্কাই সত্য প্রমাণ করিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ অগস্ট ২০১৫ ০০:০৩
Share:

পাঁচ বছর আগে দিল্লি সফরে আসিয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন বলিয়াছিলেন যে, সংস্কার-উত্তর রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে তিনি ভারতকে স্থায়ী সদস্য হিসাবে দেখিতে চাহেন, তখন চিনের এক পত্রিকা লিখিয়াছিল, ‘ভারতীয়দের মন ভুলাইতে ওবামা যে চেক দিয়া গিয়াছেন, তাহা ভাঙাইতে ভারতকে বেগ পাইতে হবে।’ নিরাপত্তা পরিষদের সংস্কার লইয়া সম্প্রতি আমেরিকা, রাশিয়া এবং চিন সেই আশঙ্কাই সত্য প্রমাণ করিয়াছে। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এই তিন দেশ বলিয়াছে, পরিষদের স্থায়ী এবং অস্থায়ী সদস্য সংখ্যার মাঝারি মাপের বিস্তার ঘটাইতে তাহাদের নীতিগত আপত্তি নাই, কিন্তু কোনও সিদ্ধান্তে ভেটো দেওয়ার ক্ষমতাধারী দেশের সংখ্যা বাড়াইতে তাহারা নারাজ। বার্তা স্পষ্ট। যে জাদুদণ্ডের জোরে তাহারা বৃহৎ শক্তি, রাষ্ট্রপুঞ্জের এবং এক অর্থে বিশ্বের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা, তাহার ভাগিদার বৃদ্ধি হউক, ইহা তাহাদের না-পসন্দ। পরিষদের আর দুই স্থায়ী সদস্য, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এখনও ভারতকে ভেটো মর্যাদা দেওয়ার পক্ষপাতী হইলেও বাকি তিনের এক জনও বাঁকিয়া বসিলে তাহা সম্ভব নহে। সুতরাং নিরাপত্তা পরিষদে ভারতের পদপ্রাপ্তি ফের বিশ বাঁও জলে।

Advertisement

চিনের সহিত ভারতের সম্পর্ক চিরকালই নরমে-গরমে। আঞ্চলিক রাজনীতিতে একে অপরের প্রতিপক্ষ। সুতরাং আগে প্রকাশ্যে ভারতের দাবিকে সমর্থন করিলেও দিল্লির উত্থান শেষ বিচারে বেজিংয়ের স্বার্থের পরিপন্থীই। ঠান্ডা যুদ্ধের পরবর্তী পর্যায়ে রাশিয়ার সহিত সহযোগিতার সেই বাতাবরণ নাই, যদিও মস্কো এই সে দিন পর্যন্ত স্থায়ী সদস্যপদের প্রশ্নে ভারতের পাশে দাঁড়াইয়াছিল। কিন্তু আমেরিকার মতবদলই দিল্লিকে ধাক্কা দিয়াছে সব চেয়ে বেশি। ২০০৮ সালের পরমাণু চুক্তির পরে দুই দেশ পরস্পরের অনেক কাছাকাছি আসিয়াছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতকে আর উদীয়মান নহে, পুরোদস্তুর উদিত শক্তির তকমা দিয়াছেন। চলতি বছরের গোড়ায় ভারত সফরেও পরিবর্তিত সমীকরণেরও ইঙ্গিত দিয়াছিলেন ওবামা। এ দেশের শাসককুল মনে করিয়াছিলেন, আন্তর্জাতিক মঞ্চে শক্তিপ্রতিষ্ঠার সমিধ তাঁহারা সংগ্রহ করিয়া ফেলিয়াছেন। আমেরিকার প্রত্যাখ্যান তাঁহাদের স্বপ্ন ভঙ্গ করিয়াছে।

স্থায়ী সদস্যপদ প্রাপ্তির লক্ষ্যে দীর্ঘকাল সওয়াল চলিলেও এক বছর আগে ক্ষমতায় আসিয়া দেশকে নবোদ্যমে সেই স্বপ্ন ঘোড়ার চড়নদার করিয়াছিলেন নরেন্দ্র মোদী। বিজেপি ঘোষণা করিয়াছিল, জগৎসভায় ভারতের যথাযোগ্য আসন প্রধানমন্ত্রী আদায় করিয়া লইবেন। সম্প্রতি ফ্রান্সে গিয়া মোদী বলিয়াছিলেন, ‘ভিক্ষা চাহিবার দিন গিয়াছে। আমরা আমাদের অধিকার আদায় করিয়া লইব।’ সেই অর্জন মুখের কথায় হইবে না, তাহার জন্য রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধির বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং অর্থনীতির মেরুদণ্ডটি মজবুত করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক কূটনীতিতে দিল্লিকে ক্রমশই পিছনের সারিতে ঠেলিয়া দিতেছে বেজিং। পাকিস্তানের সহিত চিনের সুসম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ইদানীং সেই তালিকায় শ্রীলঙ্কা ও নেপালের নামও যুক্ত। কূটনীতির কৌশলে পড়শিদের কাছে টানার চেষ্টা অপেক্ষা দিল্লির বিরুদ্ধে দাদাগিরির অভিযোগই বেশি। অর্থনীতির প্রশ্নেও ভারতের পক্ষে নূতন করিয়া বলিবার কিছু নাই। সংস্কারের রথের চাকা দীর্ঘকাল অবরুদ্ধ। শিল্পচিত্র ম্রিয়মাণ, পটপরিবর্তনের লক্ষণও সুদূরপরাহত। কোমরের জোর ব্যতীত শক্তির সাধনা অসার। রাষ্ট্রপুঞ্জেও একই নিয়ম।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement