ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকেরবার্গ ইদানীং প্রতি বৎসরের প্রারম্ভে ফেসবুক-বন্ধুদের অনুরোধ করেন, এই বৎসরে তাঁহারা তাঁহাকে একটি নূতন কিছু করিবার পরামর্শ, বা বলা ভাল, চ্যালেঞ্জ দিন, মার্ক সেইগুলির মধ্য হইতে একটি প্রতিজ্ঞা বাছিয়া লইবেন ও তাহা পূরণ করিবার প্রয়াস করিবেন। ইহার পূর্বে মার্ক এক বৎসর মান্দারিন ভাষা শিখিতে ব্রতী হইয়াছিলেন, আর একটি বৎসরে প্রতি দিন এমন এক জন করিয়া ব্যক্তির সহিত পরিচিত হইতে চাহিয়াছিলেন, যিনি ফেসবুক সংস্থায় কাজ করেন না। এই বারও, অসংখ্য উত্তর আসিল, কিছু কৌতুকাবহ, কিছু সুগম্ভীর, কিছু অভিনব। কেহ বলিল, এই বৎসর আপনি ফিলিপিন্স বেড়াইতে যান, কেহ বলিল, প্রতি ফেসবুক-ব্যবহারকারীর নামে একটি করিয়া বৃক্ষ রোপণ করুন। কেহ লিখিল, আমি প্যালেস্তাইনে থাকি, আমার বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ খাইতে আসুন। কেহ মার্ককে শিক্ষকের ভূমিকায় দেখিতে চাহেন, মনে করেন, তাঁহার ফেসবুক ব্যতীত কোনও একটি বিষয়ে নিয়মিত শিক্ষাদান করা উচিত। কেহ বলিলেন, কোনও একটি যন্ত্র বাজাইতে শিখিলে হয়, কেহ ধ্যানের মূল্য সম্পর্কে মার্ককে অবহিত করিয়া বুঝাইলেন, দশ দিন সম্পূর্ণ মৌন অবলম্বন করিয়া ধ্যান করিলে শান্তি আসিবে। এক জনের পরামর্শ অনুযায়ী, মার্কের এই বৎসরের শেষে একটি হিপ-হপ অ্যালবাম করা উচিত। আর, অনাথ শিশুকে সাহায্য করিবার, বা নিজেই একটি বই লিখিবার অনুরোধ তো করা হইয়াছেই।
মার্ক এইগুলির মধ্য হইতে গ্রহণ করিয়াছেন, প্রতি এক সপ্তাহ অন্তর একটি করিয়া বই পড়িবার প্রতিজ্ঞা। তাঁহার প্রথম সপ্তাহে পড়িবার জন্য নির্বাচিত বইটি ইতিমধ্যেই তরতর করিয়া বেস্টসেলারের তালিকা বাহিতে শুরু করিয়া দিয়াছে। প্রতিজ্ঞাটি নিতান্ত জৌলুসহীন, এই রেজলিউশন বোধহয় পৃথিবীর সকলেই একাধিক বার লইয়াছেন। সিগারেট ছাড়িয়া দিবার বা জগিং শুরু করিবার প্রতিজ্ঞার মতোই এইটি নিতান্ত পুরাতন ও বহুচর্চিত। যদিও তাহাতে ইহার মূল্য কমিয়া যায় না, বই পড়ার অপেক্ষা উলটা হইয়া হট্টমূলার বৃক্ষে ঝুলিয়া থাকা একটি উদ্ভট কর্ম বলিয়া, কেবল চমকাইয়া দিবার খাতিরে তাহাকেই সাপটাইয়া ধরিতে হইবে, ইহারও কোনও অর্থ নাই। তবে, এই পরিমাণে সফল ও কৃতী মানুষের জ্ঞানান্বেষণের প্রযত্ন গজাইতে কেন ঘটাপটা করিয়া পরামর্শের প্রয়োজন হইল, প্রশ্ন উঠিতে পারে।
সর্বাধিক জনপ্রিয় হইয়াছে দুইটি অনুরোধ। তাহাদের একটি হইল, প্রতি সপ্তাহে একটি করিয়া ‘হীন’ কাজ করুন। যেমন, জমাদারের হাত হইতে ঝাড়ু লইয়া নিজে এক দিন বাথরুম সাফ করুন। বা, কফি-বিপণিতে একটি শিফ্ট টেবিলে টেবিলে খাবার পৌঁছাইয়া দিয়া আসুন। ইহাতে অবিশ্বাস্য ধনী মানুষটির বুঝিবার সুবিধা হইবে, যাঁহারা অ-কুলীন কাজে শ্রম ও মনোযোগ নিবেশ করিয়া ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করেন, তাঁহাদের পৃথিবীটা কী রূপ। অন্যটি হইল, একটি দিনের জন্য ফেসবুক বন্ধ করিয়া দিন। ছুটি দিন। এই দিনটি দুনিয়া জুড়িয়া পালিত হউক কোনও একটি নূতন মানুষের সহিত পরিচিত হইবার দিবস হিসাবে। এই বন্ধুতা হইবে বাস্তব পৃথিবীতে, ভার্চুয়াল পরদায় নহে। পরামর্শটি লইয়া হইহই হইতেছে খুব। ইহা বড় মজার, যাঁহারা ফেসবুকেই জীবনের প্রধান মুহূর্তগুলি, ধারণা বিনিময়ের ক্ষণগুলি যাপন করিতেছেন, তাঁহারাই এই ‘ফেসবুকই জীবন নহে’ কথাটিতে সর্বোচ্চ তালি বাজান, তাহার পর ফেসবুকেই লাইক দাগাইতে ব্যস্ত হইয়া পড়েন। সত্যই এক দিন ফেসবুক বন্ধ করিলে, ফেসবুকের বাহিরে অবস্থিত পৃথিবীর প্রতি এমনই সম্মান ও স্বীকৃতি জানানো হইবে, ফেসবুককে অগ্রাহ্য করিয়া বাঁচিবার বীজও সেই কুর্নিশে নিহিত থাকিবে। তাহা হইলে, ঈশ্বরের এই নত হইয়া নশ্বর প্রজাগণের নিকট নববর্ষের প্রতিজ্ঞা যাচ্ঞা করিবার তারল্য ও নাটুকেপনা তাহার মহিমা হারাইবে।
য ৎ কি ঞ্চি ৎ
ক্রিকেট মাঠে তার টাঙানো, তা বেয়ে সাঁইসাঁই ধাইছে স্পাইডারক্যাম। সেই ক্যামেরার চোটে তাক গুলিয়ে, লোপ্পা ক্যাচ ফস্কালেন স্টিভ স্মিথ। খুব খেপেছেন। কিন্তু বাওয়া, মানুষ মানুষের জন্য, খেলা টিভির জন্য। টি-টোয়েন্টিতে লোকে ফিল্ডিং করতে করতে ইন্টারভিউ দিচ্ছে। আজ বাদে কাল যখন প্রতি প্লেয়ার হাতে পায়ে কাঁখে টাকে ২৬৮টা ক্যামেরা বয়ে খেলবেন, আম্পায়ার ক্যামেরার ঢিপির ভেতর থেকে কষ্টে উঁকি মারবেন, তখন টিআরপি-র বিরুদ্ধে স্লেজিং করার ধক কার হবে?