সম্পাদকীয় ২

আধিপত্যের মাসুল

দক্ষিণ চিন সাগরে একটি তৈল-নিষ্কাশন প্রকল্প স্থাপনের চিনা উদ্যোগকে ঘিরিয়া ভিয়েতনামে চিন-বিরোধী জনমত প্রবল হইয়াছে। চিনা শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ করেন, এমন উৎপাদনকেন্দ্রে আক্রমণ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুঠতরাজ, বেশ কিছু চিনা নিহত। প্রকল্পগুলি বন্ধ হইয়া গিয়াছে, ইতিমধ্যেই সহস্রাধিক চিনা দেশে ফিরিয়া গিয়াছেন। ভিয়েতনাম সরকারের তৎপরতায় এখন হিংসার বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু চিন-ভিয়েতনাম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমূহ অবনতি ঘটিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২১ মে ২০১৪ ০০:০৬
Share:

দক্ষিণ চিন সাগরে একটি তৈল-নিষ্কাশন প্রকল্প স্থাপনের চিনা উদ্যোগকে ঘিরিয়া ভিয়েতনামে চিন-বিরোধী জনমত প্রবল হইয়াছে। চিনা শ্রমিক-কর্মচারীরা কাজ করেন, এমন উৎপাদনকেন্দ্রে আক্রমণ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুঠতরাজ, বেশ কিছু চিনা নিহত। প্রকল্পগুলি বন্ধ হইয়া গিয়াছে, ইতিমধ্যেই সহস্রাধিক চিনা দেশে ফিরিয়া গিয়াছেন। ভিয়েতনাম সরকারের তৎপরতায় এখন হিংসার বিস্ফোরণ নিয়ন্ত্রিত। কিন্তু চিন-ভিয়েতনাম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমূহ অবনতি ঘটিয়াছে। অবাঞ্ছিত ও দুর্ভাগ্যজনক হইলেও এই ঘটনা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার অশনি-সংকেত হইতে পারে।

Advertisement

প্রকাশ কারাটরা মার্কিন ভিন্ন অন্য কোনও সাম্রাজ্যবাদের অস্তিত্ব স্বীকার করেন না, কিন্তু কোনও সন্দেহ নাই যে, এই পরিস্থিতির মূলে রহিয়াছে চিনের আধিপত্যকামিতা। দক্ষিণ চিন সাগরের উপর চিনের দাবি ক্রমেই তাহার প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির কাছে মাথাব্যথার কারণ হইয়া উঠিতেছে। ইতিপূর্বে কয়েকটি দ্বীপের অধিকার লইয়া জাপানের সহিত চিনের সংঘাত প্রায় যুদ্ধ-পরিস্থিতি তৈয়ার করিয়াছিল। মালয়েশিয়া ও সম্প্রতি ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গেও দক্ষিণ চিন সাগরে যাতায়াত এবং সমুদ্রগর্ভে মজুত খনিজ সম্পদের অধিকার লইয়া চিনের কাজিয়া রীতিমত তীব্র। ফিলিপাইনে তো ভিয়েতনামের মতোই চিনা বংশোদ্ভূতদের উপর ফিলিপিনোদের আক্রোশ আছড়াইয়া পড়ে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সব দেশেই চিনারা বহু সংখ্যায় বসবাস করেন। তাঁহারা গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের নাগরিক নন, যে-সব দেশে বাস করেন, সেখানকারই নাগরিক। তথাপি গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের সহিত ওই সব দেশের বিরোধের বলি হইতে হইতেছে তাঁহাদেরই। চিনা সরকারও চিনা বংশোদ্ভবদের উপর আক্রমণকে নিজের গায়ে মাখিয়া লইয়া পাল্টা হামলার হুঙ্কার ও আস্ফালন করিতেছে। ভিয়েতনামের সহিত দ্বন্দ্বের জেরে চিন এমনকী ভারতীয় তৈল গবেষণা ও নিষ্কাশন সংস্থার ভিয়েতনামে যাওয়া লইয়াও আপত্তি জানাইয়াছে, হুমকি দিয়াছে, যাহা নবীন সাম্রাজ্যবাদী শক্তির আস্ফালনের মতো শোনায়।

এক দিকে বেজিংয়ের প্রশ্রয়পুষ্ট উত্তর কোরিয়া ক্রমাগত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার সহিত দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রের ন্যায় আচরণ করিয়া চলিয়াছে। অন্য দিকে চিন নিজেও রাষ্ট্রপুঞ্জের বাঁধিয়া দেওয়া জলসীমা অগ্রাহ্য করিয়া নিজের ইচ্ছা মতো সাগরে নিজের আধিপত্যের সীমান্ত বিস্তৃত করিতে ব্যগ্র। এই সবই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উত্তেজনার সঞ্চার করিতেছে। মার্কিন নৌবহর আবার নূতন করিয়া দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ফিলিপাইনের সহিত যৌথ মহড়া করিতেছে। রণতরী বা নৌবহরের গমনপথ লইয়া চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ছোটখাটো অশান্তিও ঘটিতেছে। এ সবই প্ররোচনামূলক এবং সংশ্লিষ্ট সকলেরই যাবতীয় প্ররোচনা হইতে নিবৃত্ত হওয়া উচিত। আলাপ-আলোচনার শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে সমাধান হয় না, এমন কোনও সমস্যা নাই। সকল পক্ষকেই তাই সংযম অবলম্বন করিয়া দ্বিপাক্ষিক, প্রয়োজনে বহুপাক্ষিক আলোচনায় বসিতে হইবে। ভিয়েতনামের সহিত চিনের পুরানো বিবাদ আছে। তাহার জেরে যেন নূতন অশান্তি সশস্ত্র সংঘর্ষের দিকে অগ্রসর না হয়। কাহারও এই বিরোধে ইন্ধন জোগানো উচিত নয় আর বৃহৎ শক্তি হিসাবে শান্তি ও স্থিতি রক্ষার প্রধান দায় এই অঞ্চলে বেজিংয়ের উপরেই বর্তায়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement