আজকাল খবরের কাগজ খুললেই প্রায়ই ছাত্রছাত্রীদের আত্মহত্যার খবর সামনে আসে। পরিসংখ্যান বলে, আধুনিক যুগের পড়ুয়াদের মধ্যে এই প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে। বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগের। তরুণ ছেলেমেয়েরা যদি বিকশিত হওয়ার আগেই অকালে ঝরে যায়, তা প্রতিভার অপমৃত্যু। এর অন্যতম কারণ, অত্যাধিক মানসিক চাপ। বিশেষ করে বাবা-মায়ের প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারার হতাশা। এই হতাশার পরিণাম কে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা পড়ুয়াদের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট।
স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে বহুবার বহু আলোচনা হয়েছে মিডিয়ায়, দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপ হয়েছে। মাঝে মধ্যে নির্দেশ এসেছে শিক্ষার্থীর পিঠের ভার কমাবার। হাল্কা হয়েছে পাঠক্রম, নিত্যনতুন পদ্ধতি আরোপিত হয়েছে ভার লাঘবের। কিন্তু বাবা মায়ের প্রত্যাশায় লাগাম টানা যায়নি।
বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় শেখা, ক্রমশ গৌন হয়ে পড়ছে। অর্থ উপার্জনই মূল লক্ষ্য। শিক্ষার্থীর মানসিক উন্নতি সেখানে গুরুত্বহীন। বিংশ শতাব্দীর শেষ দশক থেকেই খোলা বাজারে শিক্ষা ব্যবস্থাও হয়ে উঠল কপোর্রেট সংস্থার মতো মুনাফা লাভের উপায়।
এই শিক্ষাব্যবস্থায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মধ্যবিত্ত ভারতীয় সমাজ। উচ্চমানের শিক্ষার ভ্রান্ত ধারণায় তাঁরা দিশাহারা। তাঁদের প্রত্যাশার চাপ গিয়ে পড়ে ছেলেমেয়েদের উপর। আসলে বর্তমানে সন্তানই হচ্ছে বাবা মায়ের সর্বোচ্চ বিনিয়োগের লক্ষ্য। লোভনীয় চাকরির বিনিময়ে বাবা-মা যে কোনও পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে প্রস্তুত। তাঁদের চহিদা, সন্তানের বিকাশ নয়। শুধুমাত্র উচ্চমান। ফলে তৈরি হচ্ছে আবান্তর প্রতিযোগিতার ইঁদুর দৌড়। আর এই অসম প্রতিযোগিতার চাপে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কিশোর কিশোরীরা। এই অসহনীয় ফাঁস থেকে মুক্তি পেতে ফাঁসির দড়ি বেছে নিচ্ছে তারা।
কিন্তু আত্মহত্যা তো কোনও সমাধান নয়। যুগ যুগ ধরে মানুষ প্রতিকূলতাকে জয় করছে। পরিস্থিতির সঙ্গে নিজেকে খাপ খাওয়াতে শিখেছে। নিজেকে অভিযোজিত করেছে দৈহিক এবং মানসিকভাবে। শিশুকেও সেভাবেই গড়ে তোলা দরকার। এর জন্য অভিভাবক এবং শিক্ষক, দু’তরফের ভূমিকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ।
শিশুর প্রথম শিক্ষার শুরু বাড়িতে, মা-বাবার সান্নিধ্যে। তাঁরাই শিশুর সবচেয়ে বড় শিক্ষক। তাই স্রোতে না ভেসে গিয়ে শিশুকে বোঝা দরকার। ওর ইচ্ছা, চাহিদাকে গুরুত্ব দিতে হবে। মা-বাবা দু’জনকেই সময় দিতে হবে শিশুর জন্য। শিশু বাবা-মার ইচ্ছা অনিচ্ছার রূপকার হবে না। বরং শিশুর মনে কৌতূহল জাগিয়ে তুলতে হবে।ওর কাজ বা সাফল্যকে প্রশংসা করতে হবে। শিশুকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলতে হবে। অন্যদিকে, বিদ্যালয় শিশুর দ্বিতীয় বাড়ি। এখানে শিক্ষকই অভিভাবক। তাঁদেরও পড়ুয়াদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
শিক্ষার্থীকে অপমৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। তাদের সাফল্য আসবে আপনা থেকেই।