পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘর্ষ অব্যাহত।
পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় যতটা স্বস্তি এনে দিয়েছিল শাসক শিবিরে, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক ততটাই অস্বস্তির কাঁটায় বিদ্ধ এখন তারা। বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এখন দুষ্কৃতীদের দুন্দুভিনাদ, রাজনীতিকের মুখোশে সমাজবিরোধীদের হুঙ্কার, বোমা-গুলির মুহুর্মুহু আওয়াজ।
উত্তর দিনাজপুর, মালদহ, নদিয়া, বীরভূম— বিভিন্ন জেলায় আবার ফিরে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের সেই রাজনৈতিক হানাহানির কুখ্যাত সেই পুরনো ছবি। তফাত সামান্য একটু আছে, শুধুমাত্র বিরোধীদের সঙ্গে সংঘর্ষই নয়, শাসক তৃণমূল জড়িয়ে পড়েছে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষেও, এমনকি মৃত্যু ঘটেছে তৃণমূল কর্মীরও— ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের তুমুল আকাঙ্খা যতটা নেতিবাচক ভাবে ফুটে ওঠা সম্ভব, তার চেয়েও যেন বেশি কিছুর সাক্ষী থাকছি আমরা।
সুপ্রিম কোর্টের রায় রাজ্যের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠুতার সিলমোহর দিয়ে যদি থাকে, তবে তাকে ধ্বংস করার অনিবার্য দায় কেন কাঁধের উপর তুলে নিল শাসক তৃণমূল, সভ্যজনে এই প্রশ্নের উত্থাপন করতেই পারেন। কিন্তু সে তো সভ্য সমাজের স্বাভাবিক নিয়মের প্রশ্ন। এই সভ্যতার নিয়মকে যারা পরিহার্য মনে করে, স্বাভাবিকতা তাদের অভিধানে বাহুল্য মাত্র— সেখানে ক্ষমতা অর্থাত্ অর্থভাণ্ডারের চরম নৈকট্য আরও অনেক লোভনীয় প্রস্তাব। সেই প্রস্তাবের জন্য কিছু গুলি-বোমা এবং সম্ভাব্য সামাজিক তিরস্কার নিতান্ত অকিঞ্চিত্কর— দু’এক টোকায় ঝেড়ে ফেলা সম্ভব বোধ হয়।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
গণতন্ত্রের ভিত্তি ঠিক এই কুমতির চক্রেই দুর্বল হতে থাকে, এই কথা যদি এখনও না বুঝি, তবে বুঝতে হবে, আমরা এই বৃহত্ পতাকা বহন করার যোগ্যতা অর্জন করে উঠতে পারিনি এখনও। তীব্র লিপ্সা, তুমুল লোভ, চরম রিরংসা আসলে শেষ পর্যন্ত রূপ নেয় সীমাহীন নিধনস্পৃহার।
আরও পড়ুন: বোর্ড গঠন নিয়ে জেলায় জেলায় সংঘর্ষ, ইসলামপুরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে মৃত তৃণমূলকর্মী
পরিণতি কী হয়, সাক্ষ্য দেবে মুষলপর্ব। মুশকিল হল, সাক্ষ্যের শিক্ষা নেওয়ার যোগ্যতা ক্রমাগত ক্ষীণ করে আনছি আমরা। যেটুকু অবশিষ্ট আছে, একবার ভেবে দেখব কী?