প্রতীকী চিত্র।
তেলঙ্গানায় বিরল ঘটনা ঘটিল— টিআরএস দলের এক বর্তমান সাংসদের ছয় মাসের কারাদণ্ড ও জরিমানা। সাজা শুনাইল রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিচারের জন্য গঠিত এক বিশেষ আদালত। ইহার পূর্বে বিজেপি ও টিআরএস দলের দুই বিধায়ককেও ভিন্ন ভিন্ন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করিয়া কারাবাসে পাঠাইয়াছিল একই আদালত, কিন্তু কোনও বর্তমান সাংসদের এহেন শাস্তিবিধান অভূতপূর্ব— বলা হইতেছে, দেশের রাজনীতির ইতিহাসে বিরল। সাংসদকে অবশ্য জামিন দেওয়া হইয়াছে, তিনি রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করিতে পারিবেন।
সাজাপ্রাপ্ত সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ প্রমাণিত হইয়াছে। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ নূতন নহে, ভারতে দলনির্বিশেষে নেতারা এই সব এবং ততোধিক অপকর্ম করিয়া থাকেন, করিয়াও পার পাইয়া যান— ইহা কেবল ধারণাই নহে, বাস্তবও। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই নানা অপরাধে রাজনীতিকে কলুষিত করিতেছেন, সেই সব অপরাধের বিচার করিতে সুপ্রিম কোর্ট ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যে রাজ্যে বিশেষ আদালত বা ‘স্পেশাল সেশনস কোর্ট’ গড়ার নির্দেশ দিয়াছিল। উদ্দেশ্য ছিল কেবল বিচার নহে, দ্রুত বিচার। ভারতের আদালতে মামলার পরিমাণ বিপুল, নিষ্পত্তি হইতে প্রভূত সময় গড়াইয়া যায়, তদুপরি রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে মামলায় মাথাব্যথা হইয়া দাঁড়ায় তাঁহাদের প্রভাব খাটাইবার প্রবণতা। মামলা ক্রমদীর্ঘায়িত হইলে জনদৃষ্টি অন্যত্র ঘুরিয়া যায়, অপরাধও হৃতগুরুত্ব হইয়া উঠে। এইগুলি আটকাইয়া জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তিই বিশেষ আদালতের কাজ। ২০১৮-র সেপ্টেম্বরে কেন্দ্র সুপ্রিম কোর্টকে জানাইয়াছিল, তেলঙ্গানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, কেরল, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ১১টি রাজ্যে ১২টি বিশেষ আদালত চালু হইয়াছে। রাজ্য-রাজনীতির জটিলতা, অতিমারির সঙ্কট যুঝিয়াও যে বিশেষ আদালত ঠিক কাজটি করিয়া যাইতেছে, তেলঙ্গানার ঘটনা প্রমাণ।
যে দেশে রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলার সংখ্যা চার হাজারেরও অধিক, তাহারও মধ্যে অর্ধেকের বেশি মামলা বর্তমান জনপ্রতিনিধিদের নামে, সেই দেশে বিশেষ আদালতের প্রয়োজনীয়তা সন্দেহাতীত। কিন্তু, বিশেষ আদালত যদি নিধিরাম সর্দার হইয়াই থাকে— যদি সেই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল ঠুকিয়া দিনের পর দিন নিশ্চিন্তে কাটাইবার অবকাশ জনপ্রতিনিধিদের থাকে— তাহা হইলে এই গোত্রের আদালত গঠনের উদ্দেশ্যটিই মাটি হইয়া যায়। নিয়ম বাঁধিয়া দেওয়া প্রয়োজন যে, এই আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করিতে হইলে তাহা সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে করিতে হইবে, এবং তাহার জন্যও কোনও চড়া মূল্য নির্ধারণ করা জরুরি। টাকার অঙ্কে নহে— জনপ্রতিনিধিদের সচরাচর টাকার অভাব থাকে না। বরং, সর্বোচ্চ আদালতও বিশেষ আদালতের সঙ্গে অপরাধ বিষয়ে একমত হইলে সাজাপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধির শাস্তির মেয়াদ বাড়িবে, অথবা নির্বাচনে দাঁড়াইবার অধিকার কাড়িয়া লওয়া হইবে, এমন ব্যবস্থা করা যায় কি না, ভাবা প্রয়োজন।