Society

সম্পাদক সমীপেষু: সক্ষমতার পাঠ্যক্রম

অমর্ত্য সেনের বইগুলো পড়লে বোঝা যায়, কতটা সমাজ বদলের সম্ভাবনা সেখানে রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে তাঁর মূল্যবান নীতির প্রয়োগ কথা।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৬ অগস্ট ২০২২ ০৪:৪১
Share:

অমর্ত্য সেন।

অচিন চক্রবর্তীর ‘পাঠ্যক্রমে অনুপস্থিত কেন’ (২৭-৭) শীর্ষক প্রবন্ধ সম্পর্কে কিছু কথা। অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, এই দুই নোবেল প্রাপকের ভাবনা সম্পর্কে জানার অধিকার শুধু অর্থনীতির ছাত্রছাত্রী নয়, সাধারণ মানুষেরও আছে। সাধারণ মানুষের জন্য এঁদের যে মঙ্গলভাবনা, তা তো খেটেখাওয়া মানুষেরা জানেনই না। এঁরা কে, উন্নয়ন কী, তা অনেকের ধারণার বাইরে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির যাঁরা শিক্ষিত, তাঁরাও কি সবটা বোঝেন? দরকার এঁদের চিন্তাভাবনা সোজাসাপ্টা ভাষায় বলা। অর্থনীতির গূঢ় তত্ত্ব উদাহরণ দিয়ে বোঝানো। কাজটা মাস্টারমশায়দেরই।

Advertisement

অমর্ত্য সেনের বইগুলো পড়লে বোঝা যায়, কতটা সমাজ বদলের সম্ভাবনা সেখানে রয়েছে। তার সঙ্গে রয়েছে তাঁর মূল্যবান নীতির প্রয়োগ কথা। দারিদ্র, সামাজিক বঞ্চনা, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা— সবই তাঁর আলোচনায় আসে। তাঁর উন্নয়ন ও স্ব-ক্ষমতা গ্রন্থে তিনি যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন যে, তরুণ বেকারদের বেকারভাতা দেওয়া হলে তা তাঁদের বেকারত্বের জ্বালা উপশম করে ঠিকই, কিন্তু এই সাহায্য অন্য কোনও বঞ্চনাও ডেকে আনতে পারে। যেমন, আত্মবিশ্বাসের অভাব, মানসিক ক্ষতি, কাজে অনুৎসাহ, রোগ, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। নারীশিক্ষা এবং নারীদের কর্মসংস্থান হলে যে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ হবে ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমবে, সে কথা তিনি প্রাঞ্জল ভাবে বুঝিয়েছেন। মূল্যবোধ, যা আজ প্রায় লুপ্ত হতে বসেছে, তার উপরে তিনি জোর দিয়েছেন, এবং বলেছেন যে, মূল্যবোধের সঙ্গে গণতন্ত্রের সম্পর্ক অত্যন্ত দৃঢ়। যে ভঙ্গিমায় তিনি তাঁর ভাবনাগুলো বলেন, মনে হয় তিনি যেন আমাদের অভিভাবক। আন্তর্জাতিক আঙিনায় তাঁর অনায়াস বিচরণ, রাষ্ট্রপুঞ্জ তাঁর মঙ্গলভাবনার দ্বারা প্রভূত উপকৃত। কিন্তু যাঁদের জন্য তাঁর ভাবনা, তাঁরা কেমন করে জানবেন? তাঁর মূল্যবান বিশ্লেষণ সবার জানা দরকার। যখন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় আর এস্থার ডুফলো তাঁদের পুয়োর ইকনমিক্স গ্রন্থে বলেন, যে অঞ্চলে যত বেশি স্কুল, সেই অঞ্চলে তত বেশি উন্নয়ন— এর থেকে সোজা আর কী হতে পারে? তাই এঁদের রচনা পাঠ্যক্রমে আনা উচিত, এবং তা স্কুলস্তর থেকেই।

সিক্তা দাস বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান

Advertisement

ঘুঘুর বাসা

সম্প্রতি বিএলআরও অফিসের জমি-দুর্নীতি নিয়ে একাধিক খবর উঠে আসছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রকাশ্যে এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু তাতেও জালিয়াতি বন্ধ হচ্ছে কি? বিশেষত উত্তরাধিকার সূত্রে মিউটেশনের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারীর সার্টিফিকেট ঘিরে এই জালিয়াতি অত্যন্ত প্রকট। এক জনের মৃত্যুর পর তাঁর সব সম্পত্তি জাল কাগজ জমা দিয়ে অন্য কিছু লোক নিঃশব্দে হাতিয়ে নিচ্ছে। স্রেফ মুহুরিদের বলির পাঁঠা বানিয়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না, আসলে সমস্যার শিকড় অনেক গভীরে। মুহুরিদের অফিস থেকে তাড়ানো হচ্ছে, বেশ কিছু জালিয়াতির ঘটনায় বিএলআরও-র তরফে থানায় অভিযোগ দাখিলও হচ্ছে, কিন্তু সংশ্লিষ্ট রেভিনিউ অফিসারের বিরুদ্ধে কোনও বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে কি? আইনত পুরসভার চেয়ারম্যান অথবা পঞ্চায়েতের প্রধান ব্যতিরেকে অন্য কোনও জনপ্রতিনিধি উত্তরাধিকারী সার্টিফিকেট দিতেই পারেন না। তা হলে বিএলআরও অফিস এর পরেও কাউন্সিলর, পঞ্চায়েত সদস্যদের দেওয়া শংসাপত্র গ্রহণ করছে কী ভাবে?

আইনে বলা আছে, মিউটেশন আবেদনের নিষ্পত্তি করার আগে উত্তরাধিকারী সার্টিফিকেট প্রদানকারী পুরসভা/পঞ্চায়েত থেকে ভেরিফিকেশন করতে হবে, কিন্তু বাস্তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত রেভিনিউ অফিসার সে সব করছেন কি? রোগ আছে ভূমি দফতরের আধিকারিকদের ভিতরেই। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে উদ্যোগী হয়েছেন, সেটা রাজ্যবাসীর পক্ষে আশার কথা। কিন্তু স্থানীয় থানা নয়, বরং এই ধরনের জমি জালিয়াতির প্রতিটি ঘটনায় সিআইডি-র মাধ্যমে তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন।

শৌভিক বন্দ্যোপাধ্যায়, নবদ্বীপ, নদিয়া

সরকারি বাস

‘কোপ এসবিএসটিসি কর্মীদের বেতনে’ (৯-৮) সংবাদে নিগমের সঙ্কটের জন্য যে কারণগুলি লেখা হয়েছে, তাতে আরও কিছু সংযোজন করতে চাই। হাসপাতাল, দুধ, শ্মশান, শিক্ষার মতো রাষ্ট্রীয় পরিবহণও একটি পরিষেবামূলক প্রতিষ্ঠান। সে জন্য যাত্রী কম থাকবে জেনেও ভোর পাঁচটায় বা রাত দশটায় সরকারি বাস চালাতে হয়। কোভিড পর্বের সেই ভয়াবহ দিনগুলিতে জীবাণু সংক্রমণের ভীতি উপেক্ষা করেও এসবিএসটিসি কর্মীদের পরিযায়ী শ্রমিকদের নিখরচায় গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল। বস্তুত, অতিমারির দিনগুলিতে স্বাস্থ্যকর্মী, পুলিশের মতো পরিবহণ কর্মীদের ভূমিকা কোনও অংশে কম ছিল না। শহর ও শহরতলির ট্রেন চলাচল যখন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ ছিল, সরকারি বাস ছিল গণপরিবহণের একমাত্র উপায়। রাজ্যের ৮০ শতাংশ স্থল পরিবহণ বেসরকারি বাসমালিকের হাতে থাকলেও ২০ ভাগ সরকারি বাস আপৎকালীন পরিস্থিতিতে, পরীক্ষার দিনে, বন্‌ধ, বেসরকারি বাস মালিকের ধর্মঘট ভাঙার কাজে, গঙ্গাসাগর তীর্থযাত্রায় ব্যবহৃত হয়। বেসরকারি মালিকের একটি বাস, এক জন ড্রাইভার ও কনডাক্টর, এই তিন জন থাকলেই চলে। কিন্তু সরকারি বাসের মালিক যে-হেতু করদাতারা, তাই সরকারি অর্থের নজরদারির জন্য এই তিন জনের বাইরে সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য প্রয়োজন হয় সিকিয়োরিটি, গ্যারাজ মেকানিক থেকে অ্যাডমিন সেকশন-সহ নানা ক্ষেত্রের এক পিরামিড শৃঙ্খল। তাই দক্ষিণবঙ্গ সরকারি নিগমে বাস-পিছু কর্মী-সংখ্যা প্রায় ৬। এবং এর জন্য সরকারকে নিয়মিত অর্থ জোগাতেই হয়।

নিগমের স্বাস্থ্য বোঝার জন্য দেখতে হবে কিলোমিটার পিছু আয় ও খরচ। বলা বাহুল্য, রাজ্য সরকার কর্মীদের মাস মাহিনার পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার পরও আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি (৩০-৪৪ টাকা)। ফারাক যত কমানো যায়, নিগমের আর্থিক হাল তত ভাল বলে গণ্য হয়। ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি, গাড়ির যন্ত্রাংশের অস্বাভাবিক খরচ, টোল-ট্যাক্স বৃদ্ধি হওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকার ভাড়া না বাড়ানোয় আয়-ব্যয়ের ফারাক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে, আর্থিক হাল ক্রমশ রুগ্ণ হয়েছে। প্রতি ত্রৈমাসিকে প্ল্যান ফান্ডের বরাদ্দ টাকা হল ওই ফাঁক পূরণের টাকা, যা ঠিকা শ্রমিকদের বেতন দিতে ও টায়ার-টিউব-ব্যাটারি’সহ অন্য যন্ত্রাংশ কেনার জন্য, বাস মেরামতির কাজে ব্যবহৃত হয়। এই অর্থবর্ষে প্ল্যান ফান্ডের টাকা না-আসাতেই বিপত্তি। ডিজ়েলের অভাবে গাড়ি বসে যাচ্ছে। রাজস্ব আদায় কম, অথচ খরচ অপরিবর্তিত।

পেশাদারি অদক্ষতা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, এই দুই ব্যাধি নিগমগুলির স্বাবলম্বী হওয়ার পথে মস্ত অন্তরায়। পুরাতন ভলভো বাস নামক সাদা হাতি পোষা, অলাভজনক রুটে বাস চালানো, নামমাত্র মূল্যে এজেন্টের হাতে গাড়ি ছেড়ে দেওয়া যদি অপেশাদারির নমুনা হয়, তবে অর্থ দফতরের অনুমতি না নিয়ে রাজনৈতিক চাপে ৩৭৫ জন ঠিকা শ্রমিকের নিয়োগ, তাঁদের বেতন সংস্থার আয় থেকে দেওয়া, লাভের বিচার না-করেই ক্রান্তিকালে আট-দশটি বাস দিয়ে একাধিক ডিপো (বান্দোয়ান, মানবাজার, বহরমপুর, ক্ষীরপাই) চালু করা রাজনৈতিক অবিমৃশ্যকারিতার পরিচয়।

গড় ১৫ হাজার টাকা বেতনে ঠিকা চুক্তিতে নিযুক্ত প্রায় ১৪০০ চালক-পরিচালক-অন্যান্য কর্মচারী ৭৫ শতাংশ বেতনে মুষড়ে পড়েছেন। উপরন্তু তেলের অভাবে বাস পথে কম নামায় চালক-পরিচালক ডিউটি পাচ্ছেন না, ফলে বেতন আনুপাতিক হারে আরও কমছে। গড় দশ হাজার টাকা বেতনে গ্যারাজে নিযুক্ত চারশো ঠিকা মেকানিক আতঙ্কে সিঁটিয়ে রয়েছেন। বাস্তব উপলব্ধি করে যত দ্রুত ব্যবস্থা করা যায়, ততই মঙ্গল।

জি রাজশেখর, শিবপুর, হাওড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement