ছবি: সংগৃহীত
অলকা মালওয়াদে বসু ‘অশিক্ষা কমালে কাজ হবে’ (৬-৩) শীর্ষক নিবন্ধে দেখিয়েছেন, জনসংখ্যা কমলে মোট সম্পদের উপর চাপ কমবে, এমন একটা ধারণা যে আমাদের মাথায় গেঁথে রয়েছে তা ভ্রান্ত। আসলে আমাদের দেশের এমনকি উচ্চশিক্ষিত মানুষেরাও হাতে গুগল থাকা সত্ত্বেও মাথায় মিথ নিয়ে চলতে ভালবাসেন!
আমাদের দেশে যে পরিমাণ খাদ্য নষ্ট হয়ে যায়, তা দিয়ে কোটি কোটি মানুষকে ভাল ভাবে খাওয়ানো যায়। অথচ আমরা বলে চলেছি, ভারতের লোকসংখ্যা যত ক্ষণ না কমছে, দেশের উন্নতি অসম্ভব। ভারতে যেখানে এক বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব ৪৩৬, সেখানে নেদারল্যান্ডসে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে গড়ে ৫০১ জন মানুষ বাস করেন। মানব সম্পদ বিকাশের সূচকে এই দুই দেশের তুলনামূলক অবস্থান কী? যেখানে ভারতের মানব সম্পদ বিকাশে লজ্জাজনক ১২৯তম স্থানে অবস্থান, সেখানে ভারতের থেকে অনেক বেশি জনঘনত্ব নিয়ে নেদারল্যান্ডস লাভ করেছে দশম স্থান। সুতরাং ভারতের মানব সম্পদ উন্নয়নে পিছিয়ে থাকার কারণ কখনওই জনসংখ্যা নয়। এর কারণ আমাদের দেশে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানব সম্পদের অবহেলা। নেদারল্যান্ডস-এর মতো দেশ তাদের জিডিপির যত শতাংশ শিক্ষা আর স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ করে, আমরা তা করি না।
আজ থেকে শতবর্ষ আগে, ১৯২০ সালে শ্রীঅরবিন্দ ভারতবর্ষের সঠিক রোগ নির্ণয় করেছিলেন। এই রোগটির তিনি নাম দিয়েছিলেন— ‘চিন্তা ফোবিয়া’। তাঁর ছোট ভাই বারীনকে (বারীন্দ্রকুমার ঘোষ) তিনি তাঁর চিঠিতে (শ্রীঅরবিন্দের বাংলা রচনা, পৃষ্ঠা ৩৯৯) লিখেছিলেন, ‘‘আমার এ ধারণা হয় যে ভারতের প্রধান দুর্বলতার কারণ পরাধীনতা নয়, অধ্যাত্মবোধের বা ধর্মের অভাব নয়, কিন্তু চিন্তাশক্তির হ্রাস, জ্ঞানের জন্মভূমিতে অজ্ঞানের বিস্তার। সর্ব্বত্রই দেখি inability or unwillingness to think, চিন্তা করবার অক্ষমতা বা চিন্তা ‘‘ফোবিয়া’’। মধ্য যুগে যাই হোক, এখন কিন্তু এই ভাবটী ঘোর অবনতির লক্ষণ। মধ্য যুগে ছিল রাত্রীকাল, অজ্ঞানীর জয়ের দিন, আধুনিক জগতে জ্ঞানীর জয়ের যুগ, যে বেশি চিন্তা করে অন্বেষণ করে বিশ্বের সত্য তলিয়ে শিখতে পারে তার তত শক্তি বাড়ে। য়ুরোপ দেখ, দেখবে দুটী জিনিষ, অনন্ত বিশাল চিন্তার সমুদ্র আর প্রকান্ড বেগবতী অথচ সুশৃঙ্খল শক্তির খেলা। য়ুরোপের সমস্ত শক্তি সেখানে, এই শক্তির বলে জগৎকে গ্রাস কর্ত্তে পাচ্ছে আমাদের পুরাকালের তপস্বীর মত যাদের প্রভাবে বিশ্বের দেবতারাও ভীত সন্দিগ্ধ বশীভূত।’’
এর পর তিনি সেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দাঁড়িয়ে, ইউরোপ এবং ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে যা লিখেছেন, তা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘‘লোকে বলে য়ুরোপ ধ্বংসের মুখে ধাবিত। আমি তাহা মনে করি না। এই যে বিপ্লব, এই যে ওলটপালট, সে নবসৃষ্টির পূর্ব্বাবস্থা। তারপর ভারত দেখ। কয়েকজন solitary giant ছাড়া সর্বত্রই তোমার সে সোজা মানুষ অর্থাৎ average man যে চিন্তা কর্ত্তে চায় না, পারে না, যার বিন্দুমাত্র শক্তি নাই, আছে কেবল ক্ষণিক উত্তেজনা। ভারতে চায় সরল চিন্তা, সোজা কথা, য়ুরোপ চায় গভীর চিন্তা গভীর কথা।’’
আমাদের দেশের পরিস্থিতির ক্ষেত্রে, তাঁর এই চিঠি আজ ততখানিই প্রাসঙ্গিক, যতটা শতবর্ষ আগে ছিল। তিনি তাঁর চিঠিতে যথার্থই লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের সভ্যতা হয়ে গেছে অচলায়তন, ধর্ম্ম বাহ্যের গোঁড়ামি, অধ্যাত্মভাব একটী ক্ষীণ আলোক বা ক্ষণিক উন্মাদনার তরঙ্গ। এই অবস্থা যতদিন থাকিবে, ভারতের স্থায়ী পুনরুত্থান অসম্ভব।’’
সুজিৎ দে
কলকাতা-১১০
বিদ্যুৎকর্মী
‘রাজ্যের নীতি মেনেই নয়া বেতন বিদ্যুতে’ (২৩-২) সংবাদের প্রেক্ষিতে এই চিঠি। বিদ্যুৎকর্মীদের সমস্ত দিক থেকে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের স্তরে নামিয়ে আনা হল। অর্জিত অধিকার হরণ এবং চরম আর্থিক বঞ্চনার নিকৃষ্ট নজির হিসেবে চিহ্নিত যে সংশোধিত বেতন বিদ্যুৎকর্মীদের দেওয়া হল, তাতে সংশ্লিষ্ট কর্মীরা খুশি হবেন বলেই বিদ্যুৎমন্ত্রী দাবি করেছেন।
প্রথমেই বলা দরকার, বিদ্যুৎ হল সমস্ত শিল্পের শিল্প এবং বিদ্যুৎকর্মীরা শিল্প শ্রমিক হিসেবে স্বীকৃত। কোনও একটি দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হল ‘এনার্জি সেক্টর’। এই এনার্জি সেক্টরের মধ্যে বিদ্যুতের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এই শিল্পের শ্রমিকদের সঙ্গে রাজ্য সরকারি কর্মীদের তুলনা সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক ও ভিত্তিহীন। বিদ্যুৎ উৎপাদন, সংবহন ও বণ্টন সংস্থার কর্মীরা অত্যন্ত ঝুঁকিবহুল কাজের সঙ্গে যুক্ত। দুর্ঘটনা এবং মৃত্যু এঁদের নিত্যসঙ্গী। সে জন্য ‘সম ও সমজাতীয় কাজে নিযুক্ত কর্মীদের একই বেতন প্রাপ্য’— এই মানদণ্ডের নিরিখেই রাজ্যের বিদ্যুৎকর্মীদের বেতন ও ভাতা— এনটিপিসি, এনএইচপিসি, পাওয়ার গ্রিড কর্পোরেশন প্রভৃতি কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ উদ্যোগ সংস্থাগুলির সঙ্গে সমতা রেখেই হওয়া উচিত। দুর্ভাগ্য, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা দূরঅস্ত, ভারতের অন্যান্য রাজ্যের রাজ্য সরকারি বিদ্যুৎ সংস্থাগুলির চাইতেও এ রাজ্যের বিদ্যুৎ কর্মীদের বেতন-ভাতা অনেক কম।
সংশোধিত বেতন কাঠামো বিদ্যুৎকর্মীদের যা দিয়েছে, হরণ করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি মৌলিক অধিকার। যেমন—
১) দীর্ঘ সংগ্রামে বিদ্যুৎকর্মীরা কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের হারে ডিএ-র যে অধিকার অর্জন করেছিলেন, কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
২) চার বছরের বকেয়া প্রাপ্য আত্মসাৎ করা হয়েছে।
৩) বিদ্যুৎ পর্ষদ ভেঙে কোম্পানি গঠনের সময় নিয়োগ এবং আর্থিক বিষয়ে প্রদত্ত যে স্বাধিকার কোম্পানিগুলির ক্ষেত্রে আজও বলবৎ আছে, তা পদদলিত হয়েছে।
৪) অত্যন্ত ঝুঁকিবহুল কাজে যুক্ত আইটিআই ও ডিপ্লোমা কর্মীদের বহু দিনের ন্যায়সঙ্গত দাবি নস্যাৎ করা হয়েছে।
৫) কেড়ে নেওয়া পেনশনের (জিপিএফ) অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। এ ছাড়া বহু প্রান্তিক সুবিধা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উদাহরণ বাড়িয়ে লাভ নেই। উল্লেখ্য, বিদ্যুৎকর্মীদের বেতন-ভাতার আর্থিক দায়ভার কি রাজ্য সরকার বহন করে? কখনওই না। কোম্পানিগুলি আদায়ীকৃত রাজস্ব থেকেই তার কর্মচারীদের আর্থিক দায় বহন করে। অথচ দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্য সরকার বিদ্যুৎকর্মীদের ডিএ-সহ অর্জিত অধিকারগুলো নানা অজুহাতে কেড়ে নেওয়ার যে প্রয়াস চালাচ্ছিল, তা পরিপূর্ণতা পেল ‘রোপা-২০২০’র মধ্য দিয়ে।
মানস কুমার সিংহ
সাধারণ সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদ পাওয়ারমেন্স ইউনিয়ন, এআইইউটিইউসি অনুমোদিত
কালোবাজারি
করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে ভাল মাস্ক ব্যবহার করা খুবই জরুরি। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী এন-৯৫ মাস্ক বাজার থেকে উধাও করে দিয়ে ব্যাপক কালোবাজারি শুরু করেছে। বাধ্য হয়ে ওই রকম মুখোশ লোকে ২০০ টাকা দিয়ে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন, যেখানে এমনি সময়ে ওই মাস্কটি হয়তো ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। রাজ্য সরকারের উচিত এন-৯৫ মাস্ক প্রস্তুতকারী সংস্থার থেকে মাস্ক কিনে রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল থেকে বিক্রি করা।
নির্মল মৌলিক
কলকাতা-৮৪
বিতরণ
কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার জরুরি ভিত্তিতে যদি বিনামূল্যে স্কুলের বাচ্চা এবং জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক এবং সোপ পেপার বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্র, শিশুশিক্ষা কেন্দ্র, স্কুল, কলেজ মারফত বিতরণ করে, তা হলে অসাধু ব্যবসা দমনের সঙ্গে, রোগ প্রতিরোধে প্রাথমিক সাহায্য হয়।
শুভ্রাংশু বসু
শ্রীপল্লি, পূর্ব বর্ধমান
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।