Letters to the editor

সম্পাদক সমীপেষু: নেতাদের দায়

প্রধানমন্ত্রী এবং অমিত শাহ গত দু’মাসে নির্বাচনী প্রচারের জন্য যত বার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, গত সাত বছরে বাংলার উন্নয়নের জন্য আদৌ তত বার আসেননি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০২ মে ২০২১ ০৪:২৪
Share:

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রোধে যথাযথ দায়িত্ব পালন না করায় এবং চরম উদাসীনতার জন্য মাদ্রাজ হাই কোর্ট যতই নির্বাচন কমিশন ও কমিশনের আধিকারিকদের তীব্র ভর্ৎসনা করুক, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও সব রাজনৈতিক দলের নেতারা তাঁদের নৈতিক ও মানবিক দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারেন না। তাঁদেরও সমালোচনা অবশ্যই প্রাপ্য।

Advertisement

গত দু’মাস ধরে রাজ্য তথা দেশের করোনা পরিস্থিতি ও সংক্রমণের খবর টিভি, সংবাদপত্র, সমাজমাধ্যমে প্রচারিত হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা কিন্তু নিজে থেকে নির্বাচনী প্রচারে রাশ টানেননি বা নিজেরা সতর্ক হননি। অন্যকেও সতর্ক করেননি। এমনকি প্রথম দিকে নির্বাচন কমিশন অনুরোধ বা নিষেধ করা সত্ত্বেও কেউ কোনও নিয়মবিধি মানেননি। বরং নিয়মবিধি ভঙ্গ করতেই সকলের বেশি আগ্রহ ছিল, এবং তা করতে পেরে তাঁরা গর্বিত বোধ করেছিলেন! তাঁরা যদি প্রথম থেকেই বিশাল জনসভা, রোড শো বা বড় মিছিল না করে ছোট ছোট পথসভা এবং ভার্চুয়াল মিটিংয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার সারতেন, তা হলে করোনা পরিস্থিতি এত ভয়াবহ বা লাগামছাড়া হত না। এত মানুষের অকালমৃত্যুও হত না। প্রধানমন্ত্রী এবং অমিত শাহ গত দু’মাসে নির্বাচনী প্রচারের জন্য যত বার পশ্চিমবঙ্গে এসেছেন, গত সাত বছরে বাংলার উন্নয়নের জন্য আদৌ তত বার আসেননি। তাঁদের অবশ্যই এটা মাথায় রাখা উচিত ছিল যে, তাঁদের নির্বাচনী প্রচারে ভিড় অন্য রাজনৈতিক নেতাদের চেয়ে অনেক বেশি হবে, এবং সেখান থেকে সংক্রমণও অনেক তাড়াতাড়ি ছড়াবে। বাস্তবে হয়েছেও তাই।

এই বিষয়টি রাজ্যের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীরও ভাবা উচিত ছিল এবং সেইমতো পদক্ষেপ করা উচিত ছিল। কিন্তু তিনি বা তাঁর দল তা করেননি। কেননা তাঁদের কাছেও করোনা সংক্রমণ ও তাতে মানুষের অকালমৃত্যুর চেয়ে নির্বাচনী প্রচার অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল!

Advertisement

মজার কথা, রাজনৈতিক নেতা তথা মন্ত্রীরা মুখে যতই জনদরদি বলে নিজেদেরকে দাবি করুন, বাস্তব চিত্র কিন্তু ঠিক উল্টো। তাঁরা প্রতি পদে প্রমাণ করেছেন এবং করছেন যে, তাঁরা আসলে চরম স্বার্থপর এবং দেশ ও দশের পক্ষে ক্ষতিকারক।

পঙ্কজ সেনগুপ্ত

কোন্নগর, হুগলি

অবিবেচক

‘ভাবের ঘরে’ (২৬-৪) সম্পাদকীয়টি যথেষ্ট প্রণিধানযোগ্য। কেন্দ্রীয় সরকারের অবিমৃশ্যকারিতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেও কি পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে? দেশে যখন কয়েকটি রাজ্যে অতিমারি নিয়ন্ত্রণের লক্ষণ নেই এবং বিশ্বে কোথাও কোথাও মানুষ এর দ্বিতীয় বা তৃতীয় ঢেউয়ের আঘাতে জর্জরিত, তখন প্রথম সারির করোনা যোদ্ধাদের স্বাস্থ্যবিমা বন্ধ করা কতটা যুক্তিসঙ্গত, এই বিবেচনা বোধ সরকারের শীর্ষ স্তরে না থাকাটাই দুর্ভাগ্যজনক। সরকারের শুভবুদ্ধি উদয়ের জন্য করোনা যোদ্ধাদের কি আদালতের উপর নির্ভর করতে হবে?

প্রসঙ্গত উল্লেখ করতে হয়, দেশে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য সম্প্রতি মাদ্রাজ হাই কোর্ট নির্বাচন কমিশনকে কাঠগড়ায় তুলেছে এবং মানুষের মৃত্যুর জন্য কমিশনের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু করার মতো কঠোর মন্তব্য করেছে। শীর্ষ আদালতেও কোভিডের বিষয়ে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারের পক্ষে জনস্বাস্থ্য অবহেলায় আদালতের ভর্ৎসনার মুখে পড়া মোটেই কাঙ্ক্ষিত নয়।

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা

কলকাতা-১০৭

লকডাউনই পথ

অতীতের করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুর সর্বকালীন রেকর্ড অতিক্রম করে ক্রমাগত নিশ্চিত মৃত্যুর মুখোমুখি আমরা। তা সত্ত্বেও মানুষ এখনও পর্যন্ত সচেতন নন, যত্রতত্র মাস্কবিহীন অবস্থায়, বা মাস্ক পকেটে পুরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এমতাবস্থায় লকডাউনই একমাত্র বাঁচার পথ। এক দিকে গোটা দেশে অক্সিজেনের চরম ঘাটতি, তার উপরে বেশির ভাগ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে বেডের অপ্রতুলতা। তাই আর দেরি করা ঠিক হবে না। অবিলম্বে রাজ্যব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করা হোক। তাতে এক দিকে যেমন করোনা সংক্রমণ থেকে মানুষকে বাঁচানো যাবে, তেমনই নির্বাচনী ফলাফল ঘোষণার পরের হিংসাকেও আটকানো যাবে।

রবিশঙ্কর চট্টোপাধ্যায়

পাঁচলা, হাওড়া

নিয়ম ভুলে

করোনা বিধি শিকেয় তুলে দেড় মাসব্যাপী চলল গণতন্ত্রের নামে ভোটপুজোর পালা, যার পুরোহিত স্বয়ং নির্বাচন কমিশন। আদালতের ভর্ৎসনা সত্ত্বেও যে ভাবে ভোটের সঙ্গে করোনাপুজো চলছে, তাতে স্তম্ভিত হতে হয়।

তবে এটাও ঠিক যে, এ বছর নির্বাচন না হলেও মানুষ যে ভাবে নিয়মবিধি শিকেয় তুলে চৈত্র সেল বা নববর্ষে মেতে উঠেছিলেন, তাতে করোনার ভয়াল মূর্তি ধারণ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা ছিল। প্রথম থেকেই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সাবধান করে গিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা, অথচ এ দেশে প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ— সকলের একযোগে বছরভর অকুতোভয় আচরণ, উৎসব-অনুষ্ঠানের যে ধুম পড়েছিল, তা দেখে বোঝার উপায় ছিল না আদৌ কোনও মারণ ভাইরাসের অস্তিত্ব আছে কি না। অথচ, ঠিক এক বছর আগেও পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। মানুষ অজানা ভাইরাসের আতঙ্কে তখন নির্দেশিত করোনাবিধির ঊর্ধ্বে গিয়েও প্রচুর নিয়ম মেনেছেন। কিন্তু এ বছর মানুষ করোনার ভয়কে জয় করেছেন। আগের বারের ছিটেফোঁটা বিধিও এ বার চোখে পড়ছে না কোথাও। চার দিকের শোচনীয় অবস্থা দেখেও মাস্ক, স্যানিটাইজ়ারের স্থান এখনও পকেটেই। সাধারণ মানুষের আদর্শ নেতা, মন্ত্রী, বিখ্যাত ব্যক্তিরাও যদি একই পথ অনুসরণ করেন, তবে আর কী-ই বা বলার আছে!

জয়ী চৌধুরী

সোদপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

অক্সিজেন ব্যাঙ্ক

ব্লাড ব্যাঙ্কে রক্ত জমিয়ে রাখা হয়। চক্ষু ব্যাঙ্ককেও একই ভাবে ব্যবহার করা হয়। ল্যান্ড ব্যাঙ্কে জমি মজুত রাখা হয় ভবিষ্যতে নানাবিধ উন্নয়নের কাজের জন্য। এখন অতিমারিতে অক্সিজেনের চাহিদা আকাশছোঁয়া হয়েছে। অক্সিজেনের অভাবে মানুষ মারাও যাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে অক্সিজেন ব্যাঙ্ক ও বিভিন্ন এলাকায় অক্সিজেন পার্লার খোলার পরিকল্পনা করলে অক্সিজেন ঘাটতি যেমন মেটানো সম্ভব, তেমনই কিছু বেকার ছেলে-মেয়ের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করা সম্ভব। যে ভাবে রান্নার গ্যাসের ডিলারশিপ বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ চালু আছে এলাকাভিত্তিক, ঠিক সেই ভাবে অক্সিজেন সরবরাহের জন্যে একটি করে প্রজেক্ট প্রতিটি পুর এলাকায় চালু করা যায় কি না, ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।

প্রদীপ কুমার দাস

শ্রীরামপুর, হুগলি

জল সমস্যা

অতিমারি সমস্যার পাশাপাশি শুষ্ক অঞ্চলে জলজনিত সমস্যাগুলোকেও অবহেলা করলে চলবে না। এই মুহূর্তে জল সংক্রান্ত ভয়াবহ চিত্র অতিমারির আড়ালে চলে গিয়েছে। ঠিক তেমন ভাবেই যথেচ্ছ হারে জল অপচয়‌ও হচ্ছে। বেশ কিছু গ্রামীণ অঞ্চলে জল সমস্যা মেটাতে গিয়ে বড় বড় ওয়াটার প্রজেক্ট বানানো হয়েছে। কিন্তু যথেচ্ছ জল উত্তোলনে রাশ টানা সম্ভব হয়নি। এই হারে জল অপচয়ের বিষয়ে খুব তাড়াতাড়ি না ভাবলে সমস্যা আরও গভীর হবে। কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে এমনিতেই মানুষ যথেষ্ট সঙ্কটের মুখোমুখি। এর সঙ্গে তীব্র জলাভাব দেখা দিলে পরিস্থিতি খুব খারাপের দিকে যাবে। তাই প্রশাসনের তরফে অবিলম্বে এই বিষয়ে প্রচার চালিয়ে মানুষকে সচেতন করা দরকার।

শঙ্খ অধিকারী

সাবড়াকোন, বাঁকুড়া

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement