Social Media

সম্পাদক সমীপেষু: কেন এত ‘লাইক’

নব্বইয়ের দশকে স্যাটেলাইট বাহিত বাহাত্তর চ্যানেলের ড্রয়িং রুমে পৌঁছে যাওয়া ও একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে স্মার্টফোনের হাত ধরে সমাজমাধ্যম মানুষের রুচি স্থায়ী ভাবে বদলে দিতে সমর্থ হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৪:২৫
Share:

প্রত্যাশিত লাইক না পেয়ে অনেকে মুষড়ে পড়েন, বন্ধু-বিচ্ছেদও বিচিত্র নয়। ফাইল চিত্র।

‘বেছে নেওয়ার ধৈর্য কই’ (২-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে সঠিক মন্তব্য করা হয়েছে, “বাছার জন্য যে ধৈর্য ও মেধা দরকার, সেটাই শুধু বেমিল। আর বেমিল অবসর। ...টিভি সিরিয়াল আগের প্রজন্মের দ্বিপ্রাহরিক গল্প-উপন্যাস পড়া কেড়েছে। তেমন করেই পরের প্রজন্মেরও স্বাদগ্রন্থির বদল ঘটেছে।”

Advertisement

নব্বইয়ের দশকে স্যাটেলাইট বাহিত বাহাত্তর চ্যানেলের ড্রয়িং রুমে পৌঁছে যাওয়া ও একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে স্মার্টফোনের হাত ধরে সমাজমাধ্যম মানুষের রুচি স্থায়ী ভাবে বদলে দিতে সমর্থ হয়েছে। মননশীলতার পরিবর্তে চটুলতা, গভীরতার জায়গায় উৎকট উচ্ছলতা আর ‘আমাকে দেখুন’ জাতীয় আত্মপ্রদর্শন এই মাধ্যমের ইউএসপি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রত্যাশিত লাইক না পেয়ে অনেকে মুষড়ে পড়েন, বন্ধু-বিচ্ছেদও বিচিত্র নয়। প্রতিটি স্মার্টফোনের বিক্রয় এক জন চিত্রগ্রাহকের জন্ম দেয়। শ্মশান থেকে পুজোমণ্ডপ, ফুচকা স্টল থেকে ধোঁয়া ওঠা মাটন বিরিয়ানির স্টেটাস আপলোড এই মাধ্যমের সর্বাধিক প্রচলিত ট্রেলার। রুচির অবনমন আর সুপ্ত প্রচারের লোভকে উস্কে দিতে এই মিডিয়া আপাতত অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দুশ্চিন্তা, চাপ, মনোরোগ, ঘুমের ব্যাঘাত, আত্মহত্যার প্রবণতা— বিশেষজ্ঞদের এই সতর্কবার্তা হেলায় অগ্রাহ্য করে নিজেরাই অজানতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পড়ছি এই মাধ্যমে।

এ গেল একটি দিক। অপর দিকে সৃজনশীল রচনার নামে খারাপ রচনার রমরমা। এই মাধ্যমে লেখক নিজেই একাধারে সম্পাদক ও প্রকাশক। আঙুল ছুঁইয়ে মুহূর্তে নিজ রচনা হাজির করা যায় অলীক পাতায় পাতানো বন্ধু তথা পাঠকের কাছে। তথ্য বিপ্লবের মাহাত্ম্য এখানেই। পঠনপাঠন হ্রাস পাচ্ছে, পপুলার কালচারের নামে নিম্নরুচি তথা নিম্নমেধার জয়জয়কার। মুদ্রিত মাধ্যমে প্রকাশ পেতে হলে সম্পাদকের মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে হয়। সেই সব পত্রপত্রিকা যে-হেতু পাঠকবর্গ অর্থ দিয়ে কেনেন ও পড়েন, তাই পত্রিকাগোষ্ঠীকে রচনা নির্বাচনের বিষয়ে যত্নবান হতে হয়। অপাঠ্য লেখা ছাপিয়ে পাঠক হারিয়ে ব্যবসার ক্ষতি কেউ করতে চান না। ডিজিটাল মাধ্যমে সেই বালাই নেই। আমাদের দেশে নেট ব্যবহারের খরচ পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক সস্তা, এ দেশে ৩২ কোটি ফেসবুক ও ৪৮ কোটি হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারী মাসে যথাক্রমে ১৭ ও ২৩ ঘণ্টা এই দুই মাধ্যমে সময় কাটায়। মুশকিল হল, ধারাবাহিক ভাবে নিম্নমেধার আবহে সময় কাটালে লেখক-পাঠক উভয়ের মানের অবনমন ঘটে, অগভীর-তরল-লঘু রচনাকে ‘অসাধারণ’ ভ্রম হয়। কিছু মননশীল লেখাও ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তবে তা সিন্ধুতে বিন্দুসম।

Advertisement

“লেখাটা শুধু অবসর বিনোদন নয়, মানসিক বিলাস নয়। সামনে ও পিছনে দুর্জ্ঞেয় পণ্যময় জীবনের কথা জীবনের ভাষায় বলার বিপুল দায়।”— প্রেমেন্দ্র মিত্রের এই মন্তব্যটি শুধু সমাজমাধ্যম কেন, ভাদ্রমাসের শুরুতেই প্রকাশিত রাশি রাশি শারদীয়া পত্রিকার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠিত লেখক-লেখিকা কিমেনে চলেন?

সরিৎশেখর দাস, ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা

ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য

সম্পাদকীয় ‘দুঃসময়ের মন্ত্র’ (১৫-১০) এবং জয়দীপ বিশ্বাসের প্রবন্ধ ‘ব্যাঙ্ক ডুবলে অর্থব্যবস্থার বিপদ’ (১৭-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে এ বারের অর্থনীতির ক্ষেত্রে তিন নোবেলজয়ীর গবেষণার বিষয়কে ব্যাখ্যায়িত করা হয়েছে। গত প্রায় তিন দশক ধরে ব্যাঙ্ক শিল্পের কর্মচারীরা যে কথাগুলো দেশের মানুষকে বোঝাতে চাইছিলেন, এত দিন পরে সেই কথাগুলো স্বীকৃতি পেল বলে মনে হচ্ছে। আমাদের দেশের ব্যাঙ্কব্যবস্থার শুরু ১৮০৬ সালে কলকাতায় ‘ব্যাঙ্ক অব ক্যালকাটা’ গঠনের মধ্য দিয়ে। সেই ১৮০৬ সাল থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কয়েকশো বেসরকারি ব্যাঙ্ক আমাদের দেশে কাজ করেছে। সুতরাং, বেসরকারি ব্যাঙ্কব্যবস্থা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। তাই ব্যাঙ্ক রাষ্ট্রায়ত্তকরণ খুব একটা হঠকারী সিদ্ধান্ত ছিল না। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সরকারকে বাধ্য করেছিল ব্যাঙ্কব্যবস্থাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করতে। ১৯৬৯ সালে ১৪টি বেসরকারি ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করা হয়। কর্মচারী আন্দোলনের চাপ থাকা সত্ত্বেও ব্যাঙ্ক শিল্পের জাতীয়করণ কিন্তু খুব মসৃণ ভাবে হয়নি। ১৯৮০ সালে সর্বশেষ ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করা হয়েছিল। আমাদের দেশের ব্যাঙ্কের রাষ্ট্রায়ত্ত চরিত্র অটুট ছিল বলেই ২০০৮ সালে ইউরোপের মহামন্দার সময় ভারতের ব্যাঙ্কব্যবস্থা খুব ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। বর্তমান সরকার ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণে আগ্রহী। নোবেলজয়ীদের ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত গবেষণার আলোচিত কথাগুলি সরকারের কানে পৌঁছবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে!

দেবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ

ভগবানের হাত

“মারাদোনার সেই বিতর্কিত ‘হ্যান্ড অব গড’ বল নিলামে” (১৫-১০) প্রতিবেদন পড়ে মনে একটু খটকা লাগল। জানি না ওই বলটিই সেই নির্দিষ্ট বল কি না, কারণ বড় বড় টুর্নামেন্টে অনেকগুলো বল নিয়ে খেলা হয়। যদি সেই বলটিই হয়ে থাকে, তবুও আমার মতে ‘হ্যান্ড অব গড’ বলের পরিবর্তে ওই ম্যাচে মারাদোনার করা শতাব্দীর সেরা গোলের বলটি নিলাম করা হলে মারাদোনার মতো সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলারকে যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করা হত। কারণ, ‘হ্যান্ড অব গড’-এর গোলটি বিতর্কিত। পিটার শিল্টনের মতো এক জন দীর্ঘকায় গোলকিপারের মাথার উপর দিয়ে ছোটখাটো মারাদোনার পরিষ্কার হাত দিয়ে (ভুলে হাতে লেগে নয়) গোল করাটা যদি ওই ম্যাচের টিউনিশিয়ার রেফারির নজরে না এসে থাকে, তা হলে বিশ্বকাপের মতো ফুটবলের আসরে ওই রেফারির নিরপেক্ষ ভাবে ম্যাচ পরিচালনা করার যোগ্যতা ছিল কি না, সেই নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়। মারাদোনার শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো আসরে তিনি যদি ওই গোলটি করার পরে তৎক্ষণাৎ স্বীকার করে নিতেন যে, গোলটি তিনি হাত দিয়ে করেছিলেন, তা হলে মারাদোনা ভগবান রূপে স্বীকৃত হতেন। তখন বর্তমান যুগের মতো উন্নততর প্রযুক্তি ছিল না। থাকলে ওই গোলটি বাতিল হয়ে যেত এবং মারাদোনাও হলুদ কার্ড দেখতেন। তা যদি হত, তা হলে ম্যাচের ফল কী হত, বলা কঠিন। মারাদোনা সম্পর্কে আরও বিতর্ক থেকে গিয়েছে। বিশ্বকাপের মতো ফুটবলের আসর থেকেও ডোপিং-এর অপরাধে বিতাড়িত হয়েছেন। তা সত্ত্বেও ফুটবলার হিসাবে তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকে না। তাই মারাদোনার শতাব্দীর সেরা গোলের বল নিলাম না করে তার দেওয়া বিতর্কিত গোলের ‘হ্যান্ড অব গড’ বল নিলাম করে ওঁকে পরোক্ষ ভাবে অসম্মান করা হচ্ছে না কি?

সুশান্ত কুমার মেইকাপ, কলকাতা-৬০

স্ট্যান্ড সংস্কার

দীর্ঘ দিন কর্মসূত্রে কলকাতায় যাতায়াত করার সূত্রে হাওড়া ব্রিজের নিকট কলকাতাগামী বাস স্ট্যান্ডটি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। সময়ে সময়ে স্ট্যান্ডটির কিছু সংস্কার হয়েছে। তা সত্ত্বেও সেটি এখনও অপরিচ্ছন্ন, অবিন্যস্ত হয়ে রয়েছে। কলকাতা থেকে হাওড়ার দিকে যাওয়ার সময় রেল স্টেশনের বাইরের অংশ হকারদের দ্বারা দীর্ঘ দিন দখল হয়ে আছে। ফলে স্ট্যান্ড থেকে নেমে স্টেশন যাওয়া অত্যন্ত দুষ্কর ব্যাপার। কিছু বলতে গেলে লাঞ্ছিত হতে হয়।

বাস স্ট্যান্ডের মধ্যে যে দু’-একটি ইউরিনাল আছে, সেগুলিও অত্যন্ত অপরিষ্কার ও দুর্গন্ধময়। এখানেও বেশ কিছু জায়গা হকাররা দখল করে আছেন। কোনও ছাউনি না থাকায় প্রবল বৃষ্টিতে বা প্রখর তাপে যাত্রী-সাধারণকে নিদারুণ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবহণ মন্ত্রীর কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, বাস স্ট্যান্ডটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে, এর আমূল সংস্কার করে সেখানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করলে নিত্যযাত্রীদের সুবিধা হবে।

শুভ্রাংশু বেরা, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement