National news

হুঙ্কার আজ বদলে গেল সাফাইয়ে

বাস্তবে কী ঘটল, তা আমরা সকলেই দেখলাম। প্রবল নগদ-সঙ্কট, ব্যাঙ্কে-এটিএমে দীর্ঘ লাইন, মাসের পর মাস ভোগান্তি, দোকানে-বাজার শিকেয় ওঠার জোগাড়, ঘরে ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জোগানের ভাণ্ডারে টানাটানি ইত্যাদি শেষে পড়ে রইল এক অদ্ভুত শূন্যতা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ নভেম্বর ২০১৭ ০০:৪৩
Share:

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

ঠিক এক বছর আগের এক সন্ধ্যায় সেই জলদগম্ভীর স্বরে প্লীহা-চমকিত ঘোষণাটি করেছিলেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর প্রিয় ‘বোন ও ভাইদের’ সম্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাতারাতি মূল্যহীন হয়ে পড়তে চলেছে বিপুল অঙ্কের নোট। বিত্তের মানচিত্রে অকিঞ্চিৎকর অস্তিত্ব যাঁদের, ভারতীয় জনগোষ্ঠীর সেই বিরাট অংশের চোখে স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আচমকা নগদের সঙ্কটে পড়ে সংসারের নাভিশ্বাস ওঠার উপক্রম হওয়া সত্ত্বেও কোটি কোটি মানুষ বিশ্বাস করেছিলেন, সাময়িক ক্লেশের ও পারে এমন একটা মুহূর্ত অপেক্ষায় রয়েছে, যা তাঁদের পৌঁছে দেবে ধনীর পাপ-সঞ্জাত বিপুল এবং লুক্কায়িত ধনরাশির উৎসমুখে। বিশ্বাস করেছিলেন, সেই ধনরাশি কুক্ষিগত থাকবে না আর, জাতির সম্পত্তি হয়ে উঠবে তা, সুফল পৌঁছে যাবে ঘরে ঘরে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বছর পেরিয়েও বেহাল অর্থনীতি, তিন লক্ষ্যই পূরণ হয়নি নোটবন্দির

বাস্তবে কী ঘটল, তা আমরা সকলেই দেখলাম। প্রবল নগদ-সঙ্কট, ব্যাঙ্কে-এটিএমে দীর্ঘ লাইন, মাসের পর মাস ভোগান্তি, দোকানে-বাজার শিকেয় ওঠার জোগাড়, ঘরে ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় জোগানের ভাণ্ডারে টানাটানি ইত্যাদি শেষে পড়ে রইল এক অদ্ভুত শূন্যতা। কালো টাকা কত উদ্ধার হল? হিসেব দেয় না কেউ। জাল টাকা কত নষ্ট হল? স্পষ্ট জবাব মেলে না। সন্ত্রাসবাদীরা কতটা জব্দ হল? জবাব চাওয়ার প্রয়োজনই পড়ে না।

Advertisement

আরও একটা সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে, একসঙ্গে অনেকগুলো লক্ষ্য ভেদ করার পথে সরকার এগিয়েছে— এমনই কিন্তু ভেবেছিলাম আমরা। নরেন্দ্র মোদীর সরকার আচমকা যে শূন্যতা তৈরি করেছে, তাতে কালো টাকার সর্বনাশ হবে, জাল টাকা দেশ থেকে নিকেশ হয়ে যাবে, সন্ত্রাসের মূলে কুঠারাঘাত হবে— আমরা অনেকেই কিন্তু বিশ্বাস করেছিলাম এ কথা। ঘড়ির কাঁটার প্রতিটি সরণকে সাক্ষী রেখে আমরা প্রায় প্রত্যেকেই মেপে চলেছিলাম, কতখানি এগোতে পারলাম প্রত্যাশিত গন্তব্যের দিকে। নতুন করে তাই আজ আর কাউকেই বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার পড়ছে না, কতটা পূরণ হয়েছে আশা। বুঝিয়ে দেওয়ার দরকার পড়ছে না বলেই সম্ভবত নোটবন্দির এক বছর পর অস্বস্তি বাড়ছে শাসকের ঘরে। স্বতঃপ্রণোদিত তৎপরতার সঙ্গে বোঝানোর চেষ্টা চলছে, নোটবন্দি কেন অত্যন্ত জরুরি ছিল।

গত এক বছর ধরে নোটবন্দি সংক্রান্ত ঘটনাপ্রবাহের উপরে অনুপুঙ্খ নজর রাখছিলাম আমরা। বর্ষপূর্তিতে সেই দিনপঞ্জীকে বিশদে ফিরে দেখতে এবং নোটবন্দির ফলশ্রুতির বিষয়ে সবিস্তার বিশ্লেষণ পাঠকের সামনে তুলে ধরতে বিশেষ বিভাগ এনেছি আমরা। এই বিশেষ বিভাগ কেমন হল, বিশদ বিশ্লেষণের ভার রইল পাঠকের উপর।

আক্ষেপ শুধু এই যে নোটবন্দির মতো পদক্ষেপের বর্ষপূর্তিতে ভারতের অর্থমন্ত্রীকে সাফাই দেওয়ার ঢঙে কথা বলতে হচ্ছে। কালো টাকা, জাল টাকা, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কার্যকরী ওষুধ হতে চলেছে এই নোটবন্দিই— এক বছর আগে এমন কথা জোর দিয়ে বলেছিলেন যে অরুণ জেটলি, সেই জেটলিকেই আজ নোটবন্দির পক্ষে যুক্তি হাতড়াতে হচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাফল্য পেতে গেলে শুধু নোটবন্দি-ই যথেষ্ট নয়, আরও অনেক রকমের পদক্ষেপ জরুরি— মোদীর অর্থমন্ত্রীকে আজ এ কথাও মেনে নিতে হচ্ছে। মোদীও আজ একই উপলব্ধিতে পৌঁছেছেন আশা করা যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement