কাঁচা লঙ্কা, মিষ্টি পান, নলেন গুড় থেকে শুরু করে গ্রিন টি, ওয়াসাবি, লেমনগ্রাসের মতো উপকরণের চমকলাগানো স্বাদ ও গন্ধ। সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতন ক্রেতার ডায়েট মেনে ফ্যাট বা স্নেহ জাতীয় পদার্থের পরিমাণ কম। এই জোড়া হাতিয়ারকে বাজি রেখেই দেশি-বিদেশি ব্র্যান্ডের সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে ময়দানে নামছেন স্থানীয় আইসক্রিমওয়ালারা।
গোটা বিশ্বে আইসক্রিমের ক্ষেত্রে অন্যতম ছোট বাজার ভারত। বাজারের মাপ ৩৮০০ কোটি টাকার। বাজারের ওঠা-নামা অনেকটাই আবহাওয়ার উপরে নির্ভর করে। বর্তমানে ভারতে বছরে এক জন গড়ে ৪০০ মিলিলিটার আইসক্রিম খান। আমেরিকায় তা ১৪ লিটার। এবং চিনে ২.২ লিটার। তবে ইওরোমনিটরের সমীক্ষা বলছে প্রতি বছর ২৫ শতাংশ হারে বাড়তে থাকা ভারতের বাজারের ছবিটা উজ্জ্বল হবে। ২০১৭ সালে আইসক্রিমের বাজার ৬০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সেই বাজার দখলের লড়াইয়ে রকমারি স্বাদ-গন্ধের উপকরণকেই বাজি ধরছে কলকাতার মামা মিয়া, ফ্রেশ অ্যান্ড ন্যাচারাল, দিল্লির থাঙ্কোজ ন্যাচারাল , ক্রিমবেল বা মুম্বইয়ের পাস্তোনজি , ন্যাচারালের মতো সংস্থা। সকলের দাবি, তালিকায় রকমারি ‘ফ্লেভার’-এর আইসক্রিমের নিত্যনতুন সংযোজনই কিস্তিমাত করতে পারে। কারণ আইসক্রিমের বৃহত্তম ক্রেতা নতুন প্রজন্মের চাই নতুন নতুন স্বাদ।
স্বাদের পাশাপাশি অবশ্য স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দিতে চায় জেনারেশন ওয়াই। আইসক্রিম খাওয়া মানেই শরীরে একগাদা মেদ জমানো নয়। এ বিষয়েও ক্রেতারা আশ্বস্ত হতে চান বলে জানান মামা মিয়ার কর্ণধার অধিরাজ থিরানি। তাঁর দাবি, কম ফ্যাট ও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি ফলের মিশেলই মামা মিয়ার জেলাটোর আকর্ষণ। তিনি বলেন, ‘‘ সাধারণত আইসক্রিমের প্রতি স্কুপে প্রায় ১৫ শতাংশ ফ্যাট থাকে। আমাদের জেলাটোতে তা মাত্র দুই শতাংশ।’’
আইসক্রিমের স্বাদ-গন্ধ ও ক্রেতার স্বাস্থ্য টিকিয়ে রাখতে খাঁটি জিনিস ব্যবহার করার উপরেই জোর দিতে হবে বলে মনে করেন মামা মিয়ার থিরানি, ফ্রেশ অ্যান্ড ন্যাচারাল-এর কুণাল পাবরাই বা ক্রিমবেল-এর প্রধান নিতিন অরোরা। অধিরাজের দাবি, বেলজিয়ান কোকো বা সিসিলিয়ান লেবুর স্বাদ-গন্ধ পেতে এই দেশগুলির থেকেই আমদানি করতে হবে কাঁচামাল। পাবরাইয়ের দাবি, খরচ বাড়লেও তিনি সুদূর মাদাগাসকর থেকে ভ্যানিলা আমদানি করেন। কারণ আইসক্রিমের জনপ্রিয়তার চাবিকাঠি ওই উপকরণের নতুনত্বেই।
নিত্য-নতুন স্বাদ ও গন্ধের আইসক্রিমের বাজার তৈরি করতে নিজেদের সরবরাহ ব্যবস্থাও জোরদার করছে সংস্থাগুলি। মামা মিয়া চালু করছে আইসক্রিম এটিএম। ব্যস্ত রাস্তার ধারে থাকবে ছোট দোকান। দুপুর বারোটা থেকে রাত সাড়ে বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরের শহরে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে ক্রিমবেল।