প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র পোশাকে জিএসটি বাড়ানোর প্রস্তাবের বিরোধিতা করছেন। একই সুরে বিরোধিতা করছেন বিজেপির দুই উপ-মুখ্যমন্ত্রী। গুজরাতের নিতিন পটেল, বিহারের সুশীল মোদী। তাতে সায় দিচ্ছেন সিপিএম শাসিত কেরলের অর্থমন্ত্রী আইজ্যাক থমাস। গলা মেলাচ্ছেন অন্ধ্রের জগনমোহন সরকারের অর্থমন্ত্রীও। তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম— তিন রাজনৈতিক দলের এক বিন্দুতে চলে আসার এমন বিরল দৃশ্য দেখা গেল শুক্রবারের জিএসটি পরিষদের বৈঠকে।
জিএসটি আদায় বাড়ানোর রাস্তা খুঁজতে বৃহস্পতিবার রাতে আচমকাই আলোচ্যসূচিতে ঢুকেছিল পোশাকের কর ৫% থেকে বাড়িয়ে ১২% করার প্রস্তাব। যুক্তি, পোশাকে জিএসটি কম, কিন্তু তা তৈরির কাঁচামাল বা কৃত্রিম তন্তুতে বেশি। তাই এ ক্ষেত্রে যত আয় হচ্ছে, কাঁচামালে মেটানো করের রিফান্ড দিতে হচ্ছে তার বেশি। চটি-জুতো ও সারেও একই প্রস্তাব ছিল।
অমিতবাবু এর জোরালো বিরোধিতা করেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে বলেন, লোকে ধুতি-পাঞ্জাবি বা শাড়ি কিনতে গিয়ে দেখবেন জিএসটি বেড়েছে। একেই লকডাউনের ধাক্কায় ছোট-মাঝারি শিল্পের তিন ভাগের এক ভাগ বন্ধ হওয়ার মুখে। তার উপরে কর বাড়লে ভুল বার্তা যাবে। অমিতকে জোরালো সমর্থন করেন সুশীল ও নিতিন। তাঁদের সঙ্গে কেরল, অন্ধ্র যোগ দেওয়ায় পোশাকের সঙ্গে চটি-জুতো, সারের উপরে জিএসটি বাড়ানোর প্রস্তাবও শিকেয় ওঠে। তবে জিএসটি করদাতা, ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলির জন্য কিছু সুরাহার সিদ্ধান্ত হয়েছে এ দিন।
এ দিকে, লকডাউনের আগে থেকেই অর্থনীতির ঝিমুনিতে জিএসটি থেকে আয় কমছিল কেন্দ্র ও রাজ্যের। ক্ষতিপূরণ নিয়ে নিয়মিত সংঘাত বাঁধছিল দু’পক্ষের। অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, গত অর্থবর্ষে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ মেটানোর সেস তহবিলে আয় হয়েছে ১.৪৩ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু কেন্দ্রকে ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে ১.৫২ লক্ষ কোটি। আজ জিএসটি পরিষদের বৈঠকে অমিতবাবু যুক্তি দেন, আইন অনুযায়ী কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য। কিন্তু প্রশ্ন হল, কোথা থেকে মেটানো হবে! জিএসটি পরিষদ বাজার থেকে ধার করতে পারে কি? এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য, এটি কোনও কর্পোরেট বা সার্বভৌম সংস্থা নয়। বাজার থেকে ধার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আইনি দিকগুলি খতিয়ে দেখতে হবে। এতেও তাঁকে সমর্থন করেন সুশীল ও নিতিন। ঠিক হয়, জুলাইয়ে এ নিয়ে জিএসটি পরিষদের বিশেষ বৈঠক হবে।
সূত্রের খবর, লকডাউনের ফলে এপ্রিল ও মে মাসে মাত্র ৯৫ হাজার কোটি টাকার মতো জিএসটি আদায় হয়েছে। সাধারণত যা হয় এক মাসেই। অমিতবাবু বলেন, “আমাদের মার্চ, এপ্রিল, মে মাসে জিএসটি ক্ষতিপূরণ বাবদ ৫৬৩০ কোটি টাকা পাওনা।”