পশ্চিমবঙ্গের আবাসন আইনকে খারিজ সুপ্রিম কোর্টের। —নিজস্ব চিত্র।
পশ্চিমবঙ্গের আবাসন আইনকে ‘অসাংবিধানিক’ বলে খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট।
শীর্ষ আদালতের রায়, কেন্দ্র আবাসন শিল্প নিয়ন্ত্রণ আইন জারির পরেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের আবাসন শিল্প নিয়ন্ত্রণের বিধি এনে সংসদের এক্তিয়ারে অনধিকার প্রবেশ করেছে। তার উপরে আইনটি আবার হুবহু কেন্দ্রের মতো। ফলে দুই আইনের মধ্যে সংঘাত দেখা দিয়েছে। সংসদে কোনও বিষয়ে আইন তৈরির পরে বিধানসভায় একই বিষয়ে একই রকম আইন পাশ হতে পারে না।
রাজ্যের আইন খারিজ করলেও বিচারপতি ধনঞ্জয় ওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চ অবশ্য জানিয়েছে, এর আওতায় ইতিমধ্যেই যে সব আবাসন প্রকল্পের রেজিস্ট্রেশন হয়েছে বা ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, সেগুলি সমস্যায় পড়বে না। বাতিল হবে না রেজিস্ট্রেশন। পায়োনিয়ার প্রপার্টি ম্যানেজমেন্টের এমডি জিতেন্দ্র খেতানের মতে, এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। কারণ, রাজ্যের আইনে নথিবদ্ধ প্রকল্পে আবাসন ক্ষেত্রের সুরাহায় তৈরি কেন্দ্রীয় প্রকল্পে সুবিধা মিলছিল না। ইডেন রিয়ালটি-র আর্য সুমন্তের মতে, পুরনো রেজিস্ট্রেশন বহাল থাকায় প্রোমোটার বা ক্রেতাদের অসুবিধা হবে না। ক্রেডাইয়ের পশ্চিমবঙ্গ শাখার সভাপতি সুশীল মোহতা মনে করছেন, দুই আইনের উদ্দেশ্য একই। বিশেষ ফারাকও ছিল না। ফলে যে আইন মানতে হবে, মানবেন তাঁরা।
২০১৭ সালে মোদী সরকার কেন্দ্রীয় আবাসন শিল্প নিয়ন্ত্রণ আইন জারি করে। ফ্ল্যাট-বাড়ি কেনাবেচার দুনিয়ায় যা রেরা (রিয়াল এস্টেট রেগুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাক্ট)। শুধু পশ্চিমবঙ্গ তা মানেনি। কেন্দ্র রাজ্যকে এই আইন অনুযায়ী আবাসন নিয়ন্ত্রক সংস্থা তৈরির জন্য চাপ দিলেও, উল্টে কেন্দ্রীয় আইন পাশের এক বছর পরে রাজ্য বিধানসভায় ‘হিরা’ পাশ করায়।
দু’টিরই লক্ষ্য, ফ্ল্যাট-বাড়ির ক্রেতাদের স্বার্থরক্ষা, কেনা-বেচায় স্বচ্ছতা। ‘কার্পেট এরিয়া’ ধরে ফ্ল্যাটের দাম জানার সুবিধা। রাজ্যের আইনের সিংহভাগই কেন্দ্রীয় আইনের হুবহু হলেও, ক্রেতা সংগঠন ‘ফোরাম ফর পিপল্স কালেক্টিভ এফোর্টস’ অভিযোগ তোলে, কিছু ক্ষেত্রে আবাসন নির্মাতাদের সুবিধা দিয়েছে রাজ্য। তারাই এটির সাংবিধানিক বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায়। এ দিন ফোরামের সভাপতি অভয় উপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমাদের আশা, বিতর্ক এখানেই মিটে যাবে।’’
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, সংবিধানের যৌথ তালিকাভুক্ত একই বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য আইন তৈরি করেছে। এ ক্ষেত্রে সংসদের তৈরি আইনই প্রাধান্য পায়। তার উপরে রাজ্যের আইন কেন্দ্রীয়টির শব্দ ধরে ধরে নকল করা। বিচারপতি চন্দ্রচূড়ের মতে, সমান্তরাল ব্যবস্থা তৈরি করতে চেয়েছিল রাজ্য। সংবিধানে
তার অনুমতি দেওয়া যায় না।