ফাইল চিত্র।
ভারতে প্রায় চার মাস ধরে পেট্রল-ডিজ়েলের দাম স্থির। কিন্তু অতীতের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে আমজনতা থেকে বিরোধীদের দাবি, আসলে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের আগে তেল সংস্থাগুলিকে জ্বালানির দাম বৃদ্ধিতে সায় দিয়ে ভোটের আগে মানুষের বিরাগভাজন হতে চায়নি মোদী সরকার। তবে অশোধিত তেলের দরে রাশ না-পড়লে ভোট মিটলেই দেশে তার দর বৃদ্ধির সম্ভাবনার ইঙ্গিত মাসখানেক আগে দিয়েছিল সরকারি সূত্র। তার মধ্যে বুধবার চিন্তা বাড়িয়ে বিশ্ব বাজারে ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ব্যারেলে ১১০ ডলার ছুঁল। যা দেখে আর্থিক উপদেষ্টা সংস্থা জে পি মর্গ্যান জানাচ্ছে, এই অবস্থায় আগামী সপ্তাহ থেকেই দেশে বাড়তে পারে তেলের দাম।
রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের জেরে গত সপ্তাহেই সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিল অশোধিত তেল। এ দিন তা এক সময়ে ১১৩.৯৪ ডলারের পৌঁছে যায়। পরে অবশ্য তা ফের নেমে আসে ১১০ ডলারে। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, যে বাস্কেট থেকে ভারত অশোধিত তেল কেনে, সেটির দর ব্যারেলে ১ মার্চ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২ ডলার। গত নভেম্বরে ছিল ৮১.৫ ডলার। তার উপরে বুধবারই তেল রফতানিকারী দেশগুলির সংগঠন ওপেক বাড়তি উত্তোলনের আর্জিতে কান না-দিয়ে একই হারে তা বৃদ্ধির পথে হাঁটার কথা জানিয়েছে। ফলে অশোধিত তেল আরও বাড়তে পারে এবং দেশে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের। বর্তমান পরিস্থিতিতে অশোধিত তেলের দর ১৫০ ডলারে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা জে পি মর্গ্যানেরও।
যে কারণে রিপোর্টে উপদেষ্টা সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ, ‘‘ভোট মেটার পরে আগামী সপ্তাহ থেকে দেশে ফের পেট্রল-ডিজ়েলের দাম বাড়তে পারে।’’ তাদের বক্তব্য, সাধারণত রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলি গড়ে লিটার পিছু ২.৫০ টাকার মুনাফা রাখে। কিন্তু এখন তাদের লোকসান হচ্ছে ৫.৭০ টাকা করে। ফলে লাভের ঘরে ফিরতে প্রায় ১০% বা লিটারে ৯ টাকা দাম বাড়াতে হবে তাদের। যদিও সেটা একবারে না ধাপে ধাপে, তা স্পষ্ট করেনি উপদেষ্টা সংস্থা। তবে দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি কেন্দ্র সামান্য হলেও উৎপাদন শুল্ক কমাবে বলে তাদের আশা।
এ দিকে দেশে তেলের দাম ফের বাড়লে আমজনতার জীবনে মূল্যবৃদ্ধির চোখরাঙানি তো দেখা যাবেই, তেলের ডিলারদের ব্যবসাতেও ধাক্কা লাগার আশঙ্কা বাড়ছে। এ কথা জানিয়ে ইন্ডিয়ান অয়েল ডিলার্স ফোরামের রাজ্যের প্রেসিডেন্ট জন মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, নভেম্বর থেকে দাম স্থির থাকার পরেও কিছু দিন অশোধিত তেলের দর নীচের দিকেই ছিল। কিন্তু দেশে তেলের দাম কমেনি। তাই সংস্থাগুলিকে আরও কিছু দিন দাম না-বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি, ওপেক বাড়তি উত্তোলনে সায় না-দিলেও, মজুত ভান্ডার থেকে তিন কোটি ব্যারেল বাড়তি অশোধিত তেল জোগানের বার্তা দিয়েছে আমেরিকা। আরও তিন কোটি ব্যারেলের জন্য ৩০টি দেশের সঙ্গে কথাও বলেছে। কিন্তু সব মিলিয়ে তাতে কতটা কাজের কাজ হবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকছেই।