নরেন্দ্র মোদী সরকারের নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত কেড়ে নিয়েছে মানুষের কেনার ঝোঁক, যা ছাপ ফেলছে ডিসেম্বরে কল-কারখানার উৎপাদনে, রেস্তোরাঁর ব্যবসায়। বিশেষজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদরা ইতিমধ্যেই এই ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁদের মতেই বৃহস্পতিবার সিলমোহর দিল পরিসংখ্যান। বেসরকারি গবেষণা সংস্থার সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, কেনার ঝোঁক এক ঝটকায় নেমেছে তলানিতে। আর, তার প্রকোপও সবচেয়ে বেশি দিল্লি-কলকাতায়।
দোকান-বাজারে খরচ করার বহরই ঠিক করে দেয়, বাজারে চাহিদা কতটা। ভারতের ৯০% নগদ-নির্ভর অর্থনীতি থেকে ৫০০ ও ১,০০০ টাকায় মোট ১৫.৪৪ লক্ষ কোটি টাকা বা ৮৬ শতাংশ নোট এক ধাক্কায় গত ৮ নভেম্বর তুলে নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গবেষণা সংস্থা টিআরএ রিসার্চের মতে, ডিসেম্বরের মাইনে পাওয়ার পরেই বাজারে ধাক্কা লেগেছে সবচেয়ে বেশি। সাধারণ মানুষ দীর্ঘ লাইন দিয়েও রোজগারের টাকা ব্যাঙ্ক-এটিএম থেকে তুলতে নাজেহাল হয়েছেন। ফলে সহজে ব্যাগ খুলে নগদ হাতছাড়া করেননি তাঁরা। খরচে রাশ টানার এই প্রবণতাই ধরা পড়েছে ওই গবেষণা সংস্থার হিসাব করা ভারতের ‘বায়িং প্রপেন্সিটি ইন্ডেক্স’-এ। কেনার ঝোঁক মাপার এই সূচক ডিসেম্বরে এক ধাক্কায় ৪২ বেসিস পয়েন্ট পড়ে ছুঁয়েছে ০.২৬ অঙ্ক। নভেম্বরে তা ছিল ০.৬৮। সংস্থা এ জন্য নোট-কাণ্ডের দিকেই আঙুল তুলেছে।
সরাসরি ৩ হাজার ক্রেতা ও তাঁদের উপর প্রভাব ফেলতে পারেন, এমন ব্যক্তিদের উপর সমীক্ষা চালিয়ে সংস্থা প্রতি মাসে হিসাব করে কেনার ঝোঁক সংক্রান্ত এই সূচক। এর আওতায় পড়ছে ৮টি প্রথম স্তরের শহর: কলকাতা, দিল্লি, আমদাবাদ, মুম্বই, চেন্নাই, পুণে, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ। কেনাকাটার খরচের ভিত্তিতে (+১) ও (-১)-এর মধ্যে থাকা এই সূচক কমা মানে ঝিমিয়ে থাকা চাহিদা। বিশেষ করে তা শূন্যের নীচে নামার অর্থ কার্যত আগে কিনে রাখা জিনিসপত্র দিয়েই চাহিদা মিটিয়েছেন মানুষ।
কল-কারখানায় চাহিদার অভাবে ডিসেম্বরে উৎপাদন ঝিমিয়ে থাকার ইঙ্গিত আগেই মিলেছিল বেসরকারি সংস্থা নিক্কেই-মার্কিটের সমীক্ষায়। পরিষেবা ক্ষেত্রেও ব্যবসা তলানিতে নামার পূর্বাভাস দিয়েছে তারা। ওই সমীক্ষা চাহিদা তলানিতে ঠেকার জন্য নোট বাতিলের পরে নগদে টানকেই দায়ী করেছে। সেই আশঙ্কার সঙ্গে গলা মিলিয়েই বৃহস্পতিবার টিআরএ রিসার্চ-এর সিইও এন চন্দ্রমৌলি বলেন, ‘‘আচমকা নোট বাতিল ‘অস্বাভাবিক ভাবে’ টেনে নামিয়েছে কেনার ঝোঁক। তা নেমেছে গত ন’মাসের তলানিতে। সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে দিল্লিতে। কেনার ঝোঁক সংক্রান্ত সূচক নেমে হয়েছে (-০.১৪)। সরাসরি তা পড়েছে ১২২%। তার পরেই কলকাতা। পড়েছে ৯০%। অথচ জুলাই থেকেই কেনাকাটা বা়ড়ার ঝোঁকে উঠছিল এই সূচক, যাতে কোপ বসায় নোট নাকচ।’’