পায়ে পায়ে ছিয়াত্তর। দেশের স্বাধীনতার প্রায় সমবয়স্ক রানীপার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব। কথায় বলে, “চালাও পানসি বেলঘরিয়া।” সেই বেলঘরিয়ার এক পুরনো পাড়া রানীপার্ক। দিন বদলায়, সময় পাল্টায়। রানীপার্ক সর্বজনীনের পুজো কিন্তু বদলায়নি। এখনও এখানে বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসবের আয়োজন হয় সাবেকিয়ানাতেই। প্রতিমার রূপে থাকে চিরন্তন সাজ। তবে মণ্ডপসজ্জায় থাকে বিষয় ভাবনা।
এ বারে, পুজোর ৭৬তম বর্ষে যেমন রানীপার্কের থিম ‘শতবর্ষে আপনজন’। কারণ এ বছর প্রবাদপ্রতিম চলচ্চিত্র পরিচালক তপন সিংহের জন্মশতবর্ষ। তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই এ বারের মণ্ডপ ভাবনা ও সাজসজ্জা। কিংবদন্তি পরিচালকের প্রতিটি ছবিই সময়ের দলিল। ‘আদালত ও একটি মেয়ে’, ‘আতঙ্ক’, ‘অন্তর্ধান’, ‘এক ডক্টর কি মউত’ যেন চলতি সমাজে ঘটে চলা জীবনের আগাম চলছবি। আবার ‘কাবুলিওয়ালা’, ‘অতিথি’, ‘ঝিন্দের বন্দী’ যেন সাহিত্যের পাতা থেকে সটান উঠে আসে পর্দায়। ‘জতুগৃহ’, ‘বিচারক’ ব্যস্ত জীবনে দমবন্ধ করা দাম্পত্যের ছবি, যেখানে অনুশোচনা আছে, আবার ফল্গুধারার মত বয়ে চলা ভালবাসাও আছে। সব মিলিয়ে তপন সিংহ এমন একজন মানুষ, যাঁর হাত ধরে পর্দায় সমাজ নিজেকে দেখেছে। 'আপনজন' ছবিতে দুই পাড়ার ঝগড়ায় অস্থির সময়ের সাক্ষ্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে যা এখন ভীষণ প্রাসঙ্গিক।
এমন সমস্ত ছবির কোলাজই থিম ভাবনায় জায়গা করে নিয়েছে রানীপার্কের পুজোয়। মণ্ডপ রূপায়ণে শুভেচ্ছা বৈরাগ্যর তুলির টান বড় ভূমিকা নিতে চলেছে। ক্যানভাসে তাঁর তুলি ফুটিয়ে তুলবে ছবির চরিত্রগুলিকে। প্রতিমার রূপদানে রাধাগোবিন্দ মৃৎশিল্পালয়ের হরিপদ পাল। আলোক সজ্জায় সুপার রেডিও সার্ভিস। শারদোৎসবের আয়োজনে এ ভাবেই কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকারকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবে রানীপার্ক সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।