ঠিক ‘হাইলি’ না হলেও দিনটা ছিল ‘সাসপিশাস’!
মানে ২৮ জানুয়ারি তারিখটা, যে দিন আত্মপ্রকাশ করেছিল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ। যিনি এ কথা লিখছেন, তিনি জটায়ু নন। তবে দুষ্টু লোকে বলে, তাঁর অনুমতি না পেলে শহরের সরকারি হাসপাতাল চত্বরে রোদ-বৃষ্টিও নাকি থমকে যায়!
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ১৮২তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর স্মারক পুস্তিকায় সব গণ্যমান্যই শুভেচ্ছা-বার্তার পাট চুকিয়েছেন এক-আধ পাতায়। কিন্তু তিনি সাত পাতা ধরে এক দীর্ঘ ইংরেজি প্রবন্ধ লিখেছেন। এবং সেটিরই গোড়ার দিকে বলেছেন, ‘২৮ জানুয়ারি তারিখটা এক সাসপিশাস ডে!’
বলতে গেলে, গোটা রচনাটাই সাসপিশাস! ছত্রে ছত্রে তার জ্বলজ্বল করছে বানান আর ব্যাকরণের ভুল। ওই বাক্যটাতেই যেমন ‘ডে’ হয়েছে ‘dya’, ‘মাইলস্টোনস’ হয়েছে ‘milesstons’, এমনকী ‘সাসপিশাসের’ আগে একটি ‘অ্যান’ (an) শোভা পাচ্ছে! তা হলে কি ‘অসপিশাস (auspicious) ডে’, মানে ‘শুভ দিন’ লিখতে গিয়েছিলেন লেখক? ভুল করে ‘a’-এর বদলে ‘s’ পড়ে গিয়েছে? তা ছাড়া, ওই পাতার লেখক-পরিচয় বলছে, তিনি বিদ্যুৎ এবং আয়ুষ (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দফতর)-এর পরিষদীয় সচিব। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সে পদ তো কবেই উঠে গিয়েছে!
মানুষের মেশিনে কুকুরের ডায়ালিসিস প্রায় করিয়ে ফেলা, মেডিক্যালের অধ্যক্ষের চেয়ারে প্রায়শই বসে পড়ার মতো নানা কীর্তিতে স্বনামধন্য ওই প্রবন্ধের রচয়িতাকে ভাল করে প্রশ্ন করাই গেল না। প্রবল রেগে ফোন কেটে দেওয়ার আগে নির্মল মাজি আনন্দবাজারকে বললেন, ‘‘যা করেছি বেশ করেছি। আপনারা সব কিছুর মধ্যেই খোঁচাতে চাইবেন, খোঁচান!’’
অগত্যা কথাটা পাড়তে হল স্মারক পুস্তিকার দায়িত্বপ্রাপ্ত, প্রাক্তনীদের সংগঠনের সচিব তরুণকুমার মণ্ডলের কাছে। তিনি বললেন, ‘‘আমাদের কাছে সফ্ট কপিতে (অর্থাৎ, ইন্টারনেট বা পেনড্রাইভ মারফত পাঠানো সরাসরি ছাপার যোগ্য লেখা) ঠিক যা লেখা এসেছিল, সেটাই ছাপা হয়েছে।’’ কিন্তু একাধারে যিনি তৃণমূল বিধায়ক, রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সভাপতি, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান, কলেজ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান— সেই নির্মলবাবুর লেখায় এত ভুল কেন?
বোমাটা ফাটলো এ বার। মেডিক্যালের প্রতিষ্ঠা দিবস উদ্যাপন কমিটির এক চিকিৎসক-কর্মকর্তা বললেন, ‘‘নির্মলদার নির্দেশ ছিল, তাঁর লেখায় কলম চালানো চলবে না। আমরা তো ভুলটা শুধরে দিতাম। কিন্তু উনি যেখানে লেখাটা হুবহু ছাপিয়ে দিতে বলেছেন, সেখানে কার ক’টা মাথা আছে যে ‘সাসপিশাস’ কেটে ‘অসপিশাস’ করে দেয়!’’ আর এক কর্মকর্তার কথায়, ‘‘আমরা জানতাম, ‘পরিষদীয় সচিব’ লেখাটাই বেআইনি। আমরাই আদালত অবমাননার দায়ে পড়ে যেতে পারি। কিন্তু কিছু করতে পারিনি। কে যেচে বিপদে পড়বে!’’
প্রতিষ্ঠা দিবসের অনুষ্ঠানে ‘সাসপিশাস’ দেখে অসন্তুষ্ট হন অনেক অতিথিই। সম্পাদকমণ্ডলীকে ক্ষমা চাইতে হবে বলেও দাবি তুলেছিলেন তাঁরা। কিন্তু ভেতরের খবরটা জানার পর আর কিছু বলেননি। পরে এক চিকিৎসক বলছিলেন, ‘‘ওই ভুলে ভরা লেখার মধ্যেও বার দশেক তৃণমূল নেত্রীর প্রশংসা করেছেন নির্মলবাবু। খোলাখুলি লিখেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীর আস্থাভাজন। ভাগ্যিস নেত্রীর নামের বানানটা ভুল করেননি!’’
শোনা যাচ্ছে, লেখাটা এসেছিল ই-মেলে। খসড়াটা দেখা যায় না?
আরও পড়ুন: স্বাস্থ্যে কাঁপুনি ধরিয়ে খবরদারি মাজিবাবুর
আরও পড়ুন: নেতা চান, পিজি তাই তৈরি ছিল কুকুরের ডায়ালিসিসেও
নাঃ! কমিটির এক কর্মকর্তা এ বার দ্বিতীয় বোমাটা ফাটালেন। তাঁর দাবি, মঙ্গলবার সকালের পর থেকে সেই সফ্ট কপি নাকি কম্পিউটারে খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না! উল্টে নির্মল-শিবির থেকে আসছে দ্বিমুখী চাপ। কী রকম?
প্রথমত বলা হচ্ছে, নির্মলবাবুর লেখাটির একটি সংশোধিত সফ্ট কপি কমিটিকে পাঠানো হবে। সেটি-সহ সমস্ত স্মারক পুস্তিকা ফের ছাপতে হবে। বিলি হওয়া সমস্ত পুস্তিকা ফিরিয়ে নিতে হবে। আর বলতে হবে, লেখায় আগে যে সব ভুল ছিল, তার সম্পূর্ণ দায় ছাপাখানার!
দ্বিতীয়ত, এখন বলা হচ্ছে, নির্মলবাবু নাকি শুধুমাত্র লেখার বিষয়বস্তু পাল্টাতে বারণ করেছিলেন। ভুল দেখেও সম্পাদকমণ্ডলী কেন হাত গুটিয়ে রইলেন?
যে দাবি এক কথায় উড়িয়ে দিলেন এক কর্মকর্তা। বললেন, ‘‘আমরা নির্মলদাকে বলেছিলাম, সবাই একপাতার মধ্যে লিখছেন। উনিও যেন লেখাটা একটু ছোট করেন। তাতে উনি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন। বলে দিয়েছিলেন, ওঁর লেখায় যেন পেন ছোঁয়ানো না হয়। ঠিক সেটাই করা হয়েছে! এখন কী লিখতে কী লিখেছেন, উনিই বলতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy