Advertisement
Back to
Presents
Associate Partners
Lok Sabha Election 2024

টিকিট দেননি দিদি, অর্জুন কি তবে পদ্মেই ফিরবেন? আনন্দবাজার অনলাইনকে বললেন ব্যারাকপুরের সিংহ

অর্জুন সিংহ পাঁচ বছর আগে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। সাংসদ হয়ে তৃণমূলে ফিরেছেন। এখন লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে কি আবার বিজেপিতে যাবেন তিনি?

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্জুন সিংহ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অর্জুন সিংহ। — ফাইল চিত্র।

পিনাকপাণি ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৪ ১৮:৩৭
Share: Save:

প্রথম দফায় রাজ্যের যে ক’টি আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি, তার মধ্যে বাদ রাখা রয়েছে গত লোকসভা নির্বাচনে জেতা ব্যারাকপুর। আসলে বিজেপির টিকিটে জিতে অতি সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দেওয়া অর্জুন সিংহকে তৃণমূল প্রার্থী করে কি না সে দিকেই নজর ছিল পদ্মশিবিরের। কারণ, বিজেপি সূত্রে অনেক আগেই জানা গিয়েছে, অর্জুনের জন্য দলের দরজা খোলা রয়েছে। রবিবার তেমনই এক মৃদু ইঙ্গিত দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি।

ব্যারাকপুরে অর্জুনের বদলে রাজ্যের মন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে তৃণমূল প্রার্থী করার পরেই নানা জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে অর্জুনকে নিয়ে। তিনি কি বিজেপি ডাকলে সাড়া দেবেন? না কি নিজে থেকেই বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন? অর্জুনের স্পষ্ট জবাব, ‘‘সবার আগে কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলব। তাঁরা যা সিদ্ধান্ত জানাবেন, সেটাই আমার সিদ্ধান্ত।’’ আনন্দবাজার অনলাইনকে এমনটা বলার পরে সাংবাদিক বৈঠকও করেন অর্জুন। সেখানে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ তুলে অর্জুন দাবি করেন, ‘‘লোকসভায় প্রার্থী করা হবে কথা দেওয়াতেই আমি তৃণমূলে ফিরেছিলাম।’’

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

‘কর্মী-সমর্থকরাই সিদ্ধান্ত নেবেন’ জানিয়ে অর্জুন কি তাঁর মনের কথা বলে দিলেন? সাধারণত, এ সব ক্ষেত্রে কর্মী-সমর্থকদের সামনে রেখে নেতারা নিজেদের সিদ্ধান্তকে ‘বৈধতা’ দিয়ে দেন। অর্জুনের কর্মী-সমর্থকরা যদি তাঁকে বিজেপিতে যেতে বলেন, তাতে অবাক হওয়ার খুব বেশি কিছু থাকবে না। মনে করা হচ্ছে দু’এক দিনের মধ্যেই অর্জুনের পরবর্তী রাজনৈতিক পদক্ষেপ দেখা যেতে পারে। অর্জুন যে বিজেপিতেই যাবেন, তা স্পষ্ট করে বলেননি। যদিও তাঁর ঘনিষ্ঠেরা বলছেন, ‘‘তৃণমূল কথা দিয়ে কথা রাখেনি। দাদা তাই বিজেপিতে যেতে তৈরি।’’

বিজেপি নেতাদের সকলেরই প্রকাশ্য বক্তব্য, প্রার্থী কে হবেন, তা ঠিক করবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তবে দলের অন্দরে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, বিজেপি নেতারা ব্যারাকপুরে তৃণমূল পার্থকে প্রার্থী করায় ‘খুশি’। কারণ, বিজেপি এখনও পর্যন্ত ওই কেন্দ্রে অর্জুনের ‘বিকল্প’ খুঁজে পায়নি। অনেকে দীনেশের নাম বললেও রাজ্য দল মনে করে, অর্জুনের এলাকায় অন্য কাউকে প্রার্থী করলে জেতা আসন হারাতে হতে পারে। দিন কয়েক আগেই কালিয়াগঞ্চের বিধায়ক সৌমেন রায় তৃণমূলে চলে গেলেও বিজেপি তাঁকে ফিরিয়ে নিয়েছে। সেই দিনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু জানিয়েছিলেন, কাদের বিজেপিতে ফেরানো হবে, সেই সংক্রান্ত কমিটিতে তিনি রয়েছেন। ফলে তাঁর হাতে অর্জুনের জন্য দরজা খোলার ক্ষমতা রয়েছে। অর্জুন চাইলে ফিরিয়ে নিতে শুভেন্দু যে নারাজ হবেন না, তা বলছেন বিরোধী দলনেতার অনুগামীরাই।

অর্জুন তৃণমূলে ফিরলেও তাঁর পুত্র পবন সিংহ এখনও ভাটপাড়া থেকে বিজেপির বিধায়ক। তিনিই রাজ্যের সর্বকনিষ্ঠ বিজেপি বিধায়ক। দলের কাজেও তিনি সক্রিয়। অন্য রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে হিন্দিভাষী এলাকাতেও তাঁকে প্রচারে নিয়ে গিয়েছে বিজেপি। নমো অ্যাপে রাজ্যের অনেক নেতাকে পিছনে রেখে এগিয়ে থাকেন পবন। ফলে অর্জুন তৃণমূলে গেলেও জগদ্দলের মেঘনা মোড়ের সিংহ পরিবারের সঙ্গে বিজেপির যোগাযোগ মধুর। সেই সূত্রে অর্জুন চাইলে ‘না’ বলবে না বিজেপি। এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, ‘‘যা পরিস্থিতি, তাতে অপেক্ষা শুধু একটা বিষয়ের। কে প্রথম কাছে আসবে। বিজেপির প্রস্তাব যাবে জগদ্দলের মজদুর ভবনে? না কি অর্জুনের প্রস্তাব আসবে বিজেপির দফতরে?’’

প্রসঙ্গত, ভাটপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক অর্জুন ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। সেবারও ব্যারাকপুরে প্রার্থী হতে না পেরেই তিনি দলবদল করেছিলেন। হারিয়েও দিয়েছিলেন তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীকে। তবে মাত্র ১৪,৮৫৭ ভোটে। এখন পরিস্থিতি অন্য রকম। দীনেশ বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ২০২১ সালের ৬ মার্চ নীলবাড়ির লড়াইয়ের আগে। আর অর্জুন তৃণমূলে ফিরে যান ২০২২ সালের ২২ মে। যদিও খাতায়কলমে তিনি বিজেপি সাংসদই রয়ে গিয়েছেন।

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, গত কয়েকদিন ধরেই মমতা বন্দ্যো‌পাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছিলেন অর্জুন। আশা ছিল, ব্যারাকপুরেই প্রার্থী হবেন। সম্প্রতি নবান্নে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। প্রার্থী হওয়ার আশা নিয়ে রবিবার ব্রিগেডের মঞ্চেও ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তৃণমূলে তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা হিসাবে পরিচিত পার্থের নাম ঘোষণা করা হয় ব্যারাকপুরের প্রার্থী হিসেবে। তবে তার পরে অর্জুন তৃণমূলের ‘অনুগত’ সৈনিকের মতোই কথা বলেন, ‘‘দিদি যা ভাল মনে করেছেন তাই করেছেন। নির্বাচনে আমায় যা করতে বলবেন তাই করব।’’

তবে অর্জুন এমনও জানান যে, ব্যারাকপুর ছাড়া তাঁকে অন্য আসনে প্রার্থী হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে ব্যারাকপুরের বাইরে অন্য আসন থেকে প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমি রাজি হইনি। ব্যারাকপুর আমার তৈরি করা জমি। সেটা ছেড়ে অন্যত্র যাব কেন? আগের বারেও আমি ব্যারাকপুর থেকেই প্রার্থী হতে চেয়েছিলাম।’’

ব্যারাকপুরের প্রার্থী পার্থকে ফোন করে ‘মন থেকে’ অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও দাবি করেন অর্জুন। বলেন, ‘‘আমি যা করি, মন থেকেই করি। বিরোধিতা করলেও করি। সমর্থন করলেও করি।’’ কিন্তু ততক্ষণে ব্যারাকপুর লোকসভা এলাকার কয়েকটি জায়গায় অর্জুনের অনুগামীরা ‘দাদাকে কেন প্রার্থী করা হল না’ দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। এর পরেই অর্জুন নিজের বক্তব্যে স্পষ্ট করে দেন যে, বিজেপিতে ফিরতে হলে তাঁর খুব আপত্তি থাকবে না। রবিবার সন্ধ্যাতেই তিনি অনুগত কর্মী-সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন ব্যারাকপুরের বিদায়ী সাংসদ।

২০২৪ লোকসভা নির্বাচনের সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের 'দিল্লিবাড়ির লড়াই' -এর পাতায়।

চোখ রাখুন

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 Arjun Singh BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE