(বাঁ দিকে) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা (ডান দিকে)।। —ফাইল চিত্র।
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘দেশদ্রোহী’, ‘অসৎ প্রশাসক’ এবং ‘অস্থিরমতি’ বলে আক্রমণ করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা। এএনআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সন্দেশখালি প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে দৃশ্যত উত্তেজিত নড্ডাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘উনি একজন অসৎ প্রশাসক। অসৎ রাজনীতিবিদ। প্রশাসন এবং রাজনীতিকে দেখার ওঁর যে দৃষ্টিভঙ্গি, তা অত্যন্ত নিম্নমানের এবং পক্ষপাতদুষ্টও। ভোটের জন্য উনি দেশের সঙ্গে আপস করতেও রাজি। আসলে এরা সব দেশবিরোধী।’’ নড্ডার বক্তব্যকে সমালোচনা করেছে তৃণমূল। বলেছে, ‘‘আগে আয়নাটা নিজের দলের সামনে ধরুন।’’
সন্দেশখালির পরিস্থিতিতে সাম্প্রতিক ‘পরিবর্তন’ রাজ্য রাজনীতিতে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে ঠেলেছে বিজেপিকে। যেখানে মাসখানেক আগেও শাসকদলের বিরুদ্ধে অপশাসনের অভিযোগ আনছিল বিজেপি, এখন সেই বিজেপির বিরুদ্ধেই উঠেছে, সন্দেশখালিতে ‘আন্দোলন সাজানো’র অভিযোগ। এ সংক্রান্ত একটি স্টিং ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরে (ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন) বিষয়টি নিয়ে জাতীয় স্তরে প্রতিবাদ জানিয়েছিল তৃণমূল। দিল্লিতে গিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল সন্দেশখালিকাণ্ডে বিজেপির সততা নিয়ে। জানতে চেয়েছিল, তবে কি বিজেপি মিথ্যা কথা বলে জেনেশুনে জাতীয় স্তরে বাংলার অসম্মান করল? সাক্ষাৎকারে সেই জবাব এল বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের কাছ থেকে। এ ব্যাপারে সন্দেশখালির প্রথম পর্বে মমতার নীরবতা নিয়ে তৃণমূলের প্রশ্নের পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন নড্ডা।
সাক্ষাৎকারে সরাসরি তৃণমূলনেত্রীর কাছেই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জানতে চেয়েছেন, ‘‘শাহজাহান শেখের মামলায় আপনি এত দিন চুপ করে ছিলেন কেন? সিবিআইকে এনকোয়্য়ারি করতে হল। হাই কোর্টকে বলতে হল সিবিআই এনকোয়্য়ারি করুক। মহিলারা চিৎকার করে বলছিলেন। দিল্লি থেকে প্রতিনিধি দল যাচ্ছিল। আর আপনার কানে কিচ্ছু যাচ্ছিল না? আমি যদি মুখ্যমন্ত্রী হই, আর আমার কাছে যদি এই অভিযোগ আসে, তবে আমি তো আগে তদন্ত করে দেখব। কিন্তু মমতা তা করেননি। তিনি চুপ করে থেকেছেন। আর এখন বলছেন বিজেপির সাজানো ঘটনা। এটা কি রাজনীতি! মমতাজির উদ্দেশ্যটাই স্পষ্ট নয়। আমার মতে, তাঁর উদ্দেশ্য কেবল সন্দেহজনক নয়, ক্ষতিকরও।’’ যদিও তৃণমূল নড্ডার এই বক্তব্যের পাল্টা যুক্তি দিয়ে জানিয়েছে, শাহজাহানকে শেষ পর্যন্ত মমতার পুলিশই গ্রেফতার করেছিল।
দলের মুখপাত্র শান্তনু সেন বলেছেন, ‘‘জেপি নড্ডাকে মনে করিয়ে দেওয়া দরকার তৃণমূলই একমাত্র দল যারা নিজের মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে দেখিয়েছে। শাহজাহানকে মমতার পুলিশই গ্রেফতার করেছিল। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা হয়েছিল। তার আগে সুদীপ্ত সেনকেও গ্রেফতার করেছিল মমতার পুলিশ। কিন্তু বিজেপির কাছে তেমন কোনও উদাহরণ নেই। বিজেপি শাসিত রাজ্যে অভিযুক্ত বিজেপি নেতাকে বিজেপি প্রশাসন গ্রেফতার করছে, এ রকম নিদর্শন কেউ দেখাতে পাবেন না। উল্টে তাদের মাথার পালক করে রাখে বিজেপি।’’ উদাহরণস্বরূপ শান্তনু খাস প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাতের প্রসঙ্গই বলেছেন। তিনি বলেন, ‘‘গুজরাতের এক মন্ত্রিসভার সদস্যের বিরুদ্ধে সে রাজ্যেরই বিজেপির প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বার বার ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। তিনি এখনও গুজরাতের মন্ত্রিসভার সদস্য।’’ এ ছাড়া বিজেপির বিদায়ী সাংসদ তথা জাতীয় কুস্তি অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন প্রধান ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের নামও মনে করিয়ে দিয়েছে তৃণমূল। মহিলা অ্যাথলিটকে নির্যাতনে অভিযুক্ত ব্রিজের পদ গেলেও তাঁর পুত্রকে এ বছর লোকসভা ভোটের টিকিট দিয়েছে বিজেপি।
মমতা ‘দেশের সঙ্গে গদ্দারি করছেন’ বলেও অভিযোগ করেছেন নড্ডা। সিএএ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘সিএএ বাইরে থেকে আসা কাউকে দেওয়া হবে না। এটা মমতা বুঝতে পারেন না নাকি? মমতা কি এতটাই অশিক্ষিত? মোটেই না। উনি বুদ্ধিমান। সব জানেন। কিন্তু ওখানকার সরল সাদাসিধে মানুষ জানেন না, তাই তাঁদের ভুলপথে চালিত করার চেষ্টা করছেন। তৃণমূল যত অনুপ্রবেশকারীদের আশ্রয় দেয়, ওদের পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড বানায় তৃণমূলের পার্টিকর্মীরা। তার পরে তাদের ভোটার বানায়। একটা মানুষ চেয়ারের জন্য রাজ্যের সঙ্গে আপস করছে। দেশের ভালর সঙ্গে আপস করছে। আর গ্রামের সরল সাদাসিধে মানুষগুলিকে ভুল বোঝাচ্ছে। দেশের সঙ্গে গদ্দারি করে যা যা করার তার সব কিছু করার চেষ্টা করছেন মমতা।’’ তৃণমূলের পাল্টা প্রশ্ন, সিএএ যদি এতই ভাল হবে, তবে বিজেপির মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর কেন আবেদন করেননি সিএএ-র জন্য। আর সীমান্তে যদি অনুপ্রবেশ হয়ে থাকে তবে তার দায় রাজ্যের নয়। সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা বিএসএফের। যাঁরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের অধীন।
তবে মমতার নানা কাজ নিয়ে আপত্তি তুললেও তৃণমূলনেত্রী কেন হঠাৎ ভোটের মাঝে বিরোধী জোট ইন্ডিয়াকে বাইরে থেকে সমর্থন দেওয়ার কথা বলে তা আবার প্রত্যাহার করে নেন, সে ব্যাপারে কিছুই জানেন না বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি। তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘উনি কী ভাবছেন আমি জানি না। গুরুত্ব পাওয়ার জন্য উনি সব সময়ই কিছু না কিছু করতে থাকেন। তবে ওঁর ভাবনাচিন্তা যে খুব স্থিতিশীল, তা কখনও দেখিনি। উনি সব সময়ই অস্থির (আনস্টেবল) থাকেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy