Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
রেজিনগর

ঘরে ফিরেও নাবালিকা পা রাখতে পারে না রাস্তাঘাটে

পাচার হয়ে যাওয়ার বছর খানেক পরে দিল্লি থেকে পালিয়ে রেজিনগরের গ্রামে ফিরেছিল মেয়েটি। তবে, নিজের বাড়িতে ফিরেও নিরাপদ নয় ওই নাবালিকা। পাচারকারীরা গত এক মাসের মধ্যে অন্তত বার তিনেক তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছে মেয়েটির পরিবার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০১:১৬
Share: Save:

পাচার হয়ে যাওয়ার বছর খানেক পরে দিল্লি থেকে পালিয়ে রেজিনগরের গ্রামে ফিরেছিল মেয়েটি।

তবে, নিজের বাড়িতে ফিরেও নিরাপদ নয় ওই নাবালিকা। পাচারকারীরা গত এক মাসের মধ্যে অন্তত বার তিনেক তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ করেছে মেয়েটির পরিবার। তাঁদের দাবি, এ ব্যাপারে পুলিশের পরামর্শ— ‘আপসে মিটিয়ে নিন না!’

পুলিশের কাছে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার না করলে পাচারকারীরা তাদের খুন করবে বলেও হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। বছর সতেরোর ওই কিশোরী নিজেও বলছে, ‘‘আমাকে তিন বার রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছে ওরা (দুষ্কৃতীরা), থানায় সাহায্য চাইতে গেলে পুলিশ বলছে, ‘ আপসে মিটিয়ে নে না।’’

তদন্তকারী পুলিশ অফিসার মানুল্লা শেখ যা শুনে বলছেন, ‘‘তোমাদের বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করেছি। তবু কেন বাইরে বের হয়েছিস? কেস করে লাভ নেই।’’ তবে, ওই তদন্তকারী অফিসার অবশ্য অভিযোগ মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘ওই মামলায় এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, বাকিদেরও খোঁজ চলেছে। অভিযুক্তদের বাড়ি নদিয়ার কালিগঞ্জ, মুর্শিদাবাদের রেজিনগর— ছড়িয়ে ছিটিয়ে হওয়ায় কেসটা গোটাতে একটু দেরি হচ্ছে।’’

গত ৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় গ্রামের ডাক্তার খানায় যাচ্ছিল সে। সেই সময়ে তাকে ফের অপহরণের চেষ্টা করা হয় বলে ওই কিশোরীর পরিবারের অভিযোগ। ১১ জানুয়ারি বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে গেলে অন্যতম অভিযুক্ত জার্মান মোল্লা ফের তাকে বহরমপুর আদালত চত্বর থেকেই অপহরণের চেষ্টা করে। সে দিন আইনজীবীদের হস্তক্ষেপের পরে পালিয়ে গিয়েছিল জার্মান। তবে, মেয়েটি জানাচ্ছে, ‘‘গত ১ ফেব্রুয়ারি ফের ডাক্তারের কাছে যাওর সময়ে আমাকে তুলে নিয়ে য়াওয়ার চেষ্টা করে। আমি তো বাড়ি তেকে বেরোতেই পারছি না।’’

এত কিছুর পরেও রেজিনগর থানা অভিযোগ নিতে চায়নি বলে মেয়েটি জানা। ডায়েরি করতে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার সি সুধাকর সব শুনে শুধু বলছেন, ‘‘দেখছি।’’

রেজিনগরের ওই কিশোরীর বছর খানেক আগে নওদা থানার ত্রিমোহিনী এলাকার একটি বেসরকারি আবাসিক মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে পড়ত। কিশোরী বলে, ‘‘বছর খানেক আগে আমাদের কাশিপুর গ্রামের প্রতিবেশী সরফুল শেখ তার স্ত্রী ও মা— জেসমিনা বিবি ও মহিলা বেওয়াকে নিয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে বলে, আমার মা হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই ওরা আমাকে নিতে এসেছে।’’ বিশ্বাস করে তাদের সঙ্গে মাদ্রাসা ছাড়ার পরে, কাশিপুর গ্রামের তাদের বাড়ি নয়, তাকে নিয়ে যাওয়া হয় বেলডাঙা থানা এলাকার জালালপুর-মেদেরধার গ্রামে। কিশোরীর অভিযোগ, ‘‘ওরা আমাকে জালালপুর-মেদেরধার গ্রামের জার্মান মোল্লা নামে এক জনের কাছে বিক্রি করে দেয়। জার্মান মোল্লা এ বার আমাকে নদিয়ার বসরখোলা গ্রামের দারজুল শেখ, সাহিদুল শেখ ও মুনসুর শেখের কাছে বেচে দেয়।’’ সেখান থেকে তার ঠিকানা বদলে গিয়েছিল দিল্লি। এক সহৃদয় ব্যক্তির চেষ্টায় সেখান থেকেই গ্রামে ফিরতে পেরেছিল মেয়েটি। তবে, ঘরে ফিরেও যে নিশ্চিন্ত নয়, প্রতি পদেই বুঝছে সে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE