ওরা ‘পড়শি’। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে পড়শিদের পাশে পাওয়া যায়। অথচ দিনের পর দিন তাদের উপরে নির্বিচারে অত্যাচার চলছে।
আমাদের পড়শি বলতে এখানে কোনও মানুষের কথা বলা হচ্ছে না। গাছপালা, পশু-পাখিদের কথা বলা হচ্ছে। বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় রাখতে আশপাশের এই পড়শিদের সুষ্ঠুভাবে বাঁচিয়ে রাখাতে হবে। এই বার্তা দিতে রবিবার সকালে জয়নগরের সরবেড়িয়া সনাতন হাইস্কুল মাঠে একটি শিবির হয়েছে। মূল আলোচনার বিষয় ছিল ‘জীবমণ্ডল বাঁচানো ও তার প্রতিকার’।
একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে হওয়া এই আলোচনাসভায় উঠে আসে প্রতিবেশীর মতো বসবাস করে প্রাণিকুল (সাপ, ব্যাঙ, কুকুর, বিড়াল, হাঁস, মুরগি-সহ নানা পশুপাখি) ও উদ্ভিৎ জগতের নানা প্রসঙ্গ। সমাজের ভারসাম্য রক্ষায় এরা প্রত্যেকে একে অপরের উপর নির্ভরশীল। বক্তারা তুলে ধরেন, ছোট বেলায় অনেকেই দেখেছেন বাড়ির আশপাশে সকাল সন্ধ্যা পাখির কলরব, সন্ধ্যা নামার সঙ্গে মানুষ যেমন ঘরে ফেরে তেমনি পশুপাখিরাও তাদের নিজ নিজ বাসায় ফেরে। রাতে তক্ষকের গর্জন, পেঁচার ডাক-সহ নানারকম শব্দ শুনতে পাওয়া যায়। কিন্তু তারা এখন বিপন্ন। তাদের নির্বিচারে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে। কীভাবে চোরা শিকারিদের দৌরাত্মে পেঁচা, তক্ষক লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে পাচার হয়ে যাচ্ছে। আর পাখিদের বাসস্থান, খাবারের জোগান প্রায় বন্ধ। পাশাপাশি কীটনাশক খাইয়ে গুলি করে হামেশাই মেরে ফেলা হচ্ছে তাদের। বাসস্থান, খাবারের অভাবে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে বাঘের মতো পশুও। আর এই জীবজগৎ বাঁচাতে মানুষকে সচেতন হতে হবে।
পশুপ্রেমীদের কথায়, আজকের লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়লে তাকে জঙ্গলে তাড়ানোর ব্যবস্থা করি। কিন্তু ভাবতে হবে, এখন যেখানে জনবসতি গড়ে উঠেছে সেই জায়গা ঢুকে পড়া বাঘের কোনও পূর্বপুরুষ থাকত। আদতে লোকালয়ে বাঘ ঢুকে পড়ছে না, বাঘের আস্তানায় মানুষ ঢুকে পড়েছে। একই ভাবে আজ সাপ বাড়িতে ঢুকছে। ওই বাড়িটা তৈরি হওয়ার আগে থেকে ওই সাপের বংশধরেরা বসাবস করত। ওই নানা সাপের বিষ থেকেও জীবনদায়ী ওষুধ তৈরি হচ্ছে। আবার ব্যাঙ হাজার হাজার মশার লার্ভা খেয়ে মানুষের রোগ মুক্তি করে। একটি গৃহ পালিত হাঁসও দিনে ১০ হাজার এনসেফেলাইটিস মশা খেয়ে রোগ মুক্তি করে। এমনকী এক প্রকার জলজ প্রাণী এক মিনিটে ৮০টির বেশি ডেঙ্গির লাভা খেয়ে মানুষের রোগ থেকে রেহাই দিতে পারে। কিন্তু গ্রামে গ্রামে পুকুর ভরাট করে তৈরি হচ্ছে বড় বড় কংক্রিটের বাড়ি। পাকা রাস্তাঘাট। ফলে সমস্যা বাড়ছে। বিলুপ্ত হওয়ার পথে বহু প্রাণীও।
ওই দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত চিলেন আয়োজক সংস্থা দক্ষিণেশ্বর গ্রিন হেভেন সোসাইটির এবং লাভ অ্যান্ড কেয়ায় ফর এনিম্যালস, বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োযক সংস্থার সদস্য অরবিন্দ সর্দার বলেন, ‘‘এখন সব এলাকাতেই সব্জি ও ফলের বাগান করা হচ্ছে। সেখানেই মারা পড়ছে পাখিরা। আমি চাষিদের অনেক বুঝিয়েও সমস্যা সমাধান করতে পারছি না।’’ একই অভিমত ওই সংস্থার কর্ণধার অভীক সিদ্ধান্তেরও। তিনি বলেন, ‘‘মানুষ কেন যে কুকুর, বেড়াল ও অন্য প্রাণীদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালাচ্ছে তা ভেবে দেখছে না। ওরা তো আমাদেরই একজন প্রতিবেশী। তা ছাড়া বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে হলে ওদের বাঁচিয়েও রাখা খুবই দরকার।’’ পশুপ্রেমী কাকলি গুপ্তও বলেন, ‘‘সমাজে যাঁরা কুকুর, বেড়ালের উপর নির্বিচারে অত্যাচার চালাচ্ছে তাঁরা বোঝেন না ওরা আমাদের প্রতিবেশী। সকল জীবমণ্ডল বাঁচাতে হলে সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy