মহামারীর শত ভ্রূকুটি সত্ত্বেও ডারহামের এ বারের শারদ উৎসব চিহ্নিত হবে প্রথম বছরের পুজো হিসেবে।
‘আগমনী’ শব্দটি কানে এলেই বাঙালির মনে ভেসে আসে দূরের ঢাকের শব্দ, শিউলি ফুলের সুগন্ধমাখা মহালয়ার ভোরের গান ‘‘বাজলো তোমার আলোর বেণু...।’’ আর সেই করুণাময়ী মহামায়ার অনিন্দ্যসুন্দর মুখ। ভেসে আসে এক মহাজাগতিক দ্যোতনা। অপার আনন্দে ভরে ওঠে মন।
গ্রেটার টরোন্টোর ডারহামের বাঙালী অধিবাসীরা বদ্ধপরিকর— এবার অর্থাৎ ২০২১ সালে শুরু হবে প্রবাসী দুর্গাপূজো। মহামারীর শত ভ্রূকুটি সত্ত্বেও ডারহামের এ বারের শারদ উৎসব চিহ্নিত হবে প্রথম বছরের পুজো হিসেবে। সংস্থার নাম রাখা হয়েছে ‘আগমনী’।
শুরুর ভাবনায় পাহাড়প্রমাণ সমস্যা ছিল। তবে ভাগ্যবাদী না হয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিচ্ছেন কর্মকর্তারা। অন্য সকলেও (বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে) এর ফলে যারপরনাই উদ্দীপিত। তার সঙ্গে মাঝে মাঝেই নেটমাধ্যমে সমস্যা আর তার সমাধানের পর্যালোচনা। অনুষ্ঠানের বৈচিত্র্য আর সংশয়হীন সাফল্যের ইঙ্গিত। অংশগ্রহণকারীদের আনন্দ-উচ্ছ্বাস যেন স্পর্শ করা যায়। তবে প্রতি মুহূর্তেই মানা হচ্ছে কোভিড সংক্রান্ত সরকারি বিধিনিষেধ। নিজেদের স্বার্থে। সকলের স্বার্থে।
মা দুর্গার অপার মহিমা আর আশিসে এঁদের মননে জন্ম নিচ্ছে নানা সাহসী পরিকল্পনা। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের মূর্ছনা, ভারতের নানা প্রদেশের লোকগীতির ছন্দে নাচ। আর অতি প্রিয় বলিউডি মনমাতানো গানের সঙ্গে দেশি এবং বিদেশি কোরিয়োগ্রাফি। যথারীতি মহড়া চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ শুরু হয়েছে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই। কলকাতা থেকে মা আর তাঁর পরিবারের মূর্তি এসেছে। অসুর-সমেত। মূল পূজোর সমস্ত আয়োজনের সুচারু ব্যবস্থাপনায় কোনও দিশাহীনতা নেই। সর্বোপরি রসনাতৃপ্তির সরবরাহের নিখুঁত ব্যবস্থার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কর্মকর্তাদের ঘনঘন ভার্চুয়াল বৈঠক করতে হচ্ছে। আর সে সবই করতে হচ্ছে অফিসের সারা সপ্তাহের পর্বতপ্রমাণ কাজের চাপ সেরে। সেটা সম্ভব হচ্ছে কর্মকর্তা আর স্বেচ্ছাসেবকদের সহানুভূতিশীল বন্ধুত্বের তাগিদে। প্রবাসে এই শহরের প্রথম দুর্গাপুজো চিরস্মরণীয় করার জন্য থিম সংয়ের মিউজিক ভিডিয়োরও ব্যবস্থা করছে ‘আগমনী’। ভিডিয়োর পরিচালক কোরিয়োগ্রাফার সুকল্যাণ ভট্টাচার্য।
তবে গতানুগতিক গিমিকসর্বস্ব উপস্থাপনা এঁদের মূল উদ্দেশ্য নয়। জাঁকজমকের আধুনিক ব্যবস্থা তো থাকবেই। কিন্তু শুভ উৎসবে মানবিক মূল্যবোধই বোধহয় শেষ কথা। ১০ এবং ১১ অক্টোবর পিকারিং ইভেন্ট সেন্টারে মিলিত হয়েছেন সকলে। যুক্ত হয়েছেন বিশ্বাস, দায়বদ্ধতা আর একাগ্রতার এক মেলবন্ধনে। যা উৎসবের চমৎকারিত্বকে সম্ভব করেছে। সকলে মিলে আগমনীর গানে গলা মেলানোর মতো।
মায়ের আরাধনা উপলক্ষে পরস্পরের কাছাকাছি এসে একসঙ্গে এই আনন্দময় পরিবেশ উপভোগ করা এবং ভবিষ্যতেও এই মরমী সান্নিধ্য আর বন্ধুত্বের আবহে এগিয়ে চলাই এত বড় কর্মকাণ্ডের একমাত্র আশ্বাস। তবেই না সমাজ আর মনের অসুররা পরাজিত হবে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy