চলছে চা পাতা তোলার কাজ। —ফাইল চিত্র।
সচেতনতা এবং প্রযুক্তি— এই দুইয়ের সাহায্য নিয়ে ছোট চা বাগানে কীটনাশক বিধি মেনে উৎপাদন চলতে পারে বলে প্রস্তাব দিলেন ছোট চা চাষিরা। সম্প্রতি চা পর্ষদ একাধিক কীটনাশকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক আছে জানিয়ে সেগুলি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সেই কীটনাশকগুলির কয়েকটি ছোট চা বাগানে প্রচুর ব্যবহার হয়। যার ফলে, ছোট বাগানের পাতা নেওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে রাজ্য সরকার চা পর্ষদকে নিয়ে বৈঠকে বসে বিধিনিষেধের কড়াকড়ি এক বছরের জন্য শিথিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এরই মাঝে রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্য দফতর ছোট চা চাষিদের সঙ্গে বৈঠক করে তাঁদের কাছেই আগামী দিনে কী ভাবে বিধিনিষেধ মান্য করা হবে, তার প্রস্তাব চেয়ে পাঠায়। ছোট চা চাষিদের উত্তরবঙ্গের আটটি সংগঠন মিলিত ভাবে রাজ্য সরকারকে যে গুচ্ছ প্রস্তাব পাঠিয়েছে, তাতে সার্বিক ভাবে সচেতনতা প্রসার এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
ছোট চা চাষিদের সংগঠনের দাবি, নিষিদ্ধ কীটনাশক এখনও রাজ্যের বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। যদিও অসমের বাজারে মিলছে না। রাজ্য সরকারকে প্রথমেই খোলা বাজারে নিষিদ্ধ কীটনাশকের বিক্রি বন্ধ করতে বলা হয়েছে। সংগঠনের দাবি, কীটনাশকের সরবরাহ বন্ধ হলে, ব্যবহারও বন্ধ হবে। যদিও কালোবাজারির দরজা খুলে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। সংগঠনের দাবি, রাজ্য সরকার চা পর্ষদকে সঙ্গে নিয়ে সচেতনতা প্রচার চালাক, বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায় সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন থেকে প্রস্তার পু্স্তিকা প্রকাশ করুক। পঞ্চায়েত স্তর থেকে সচেতনতা প্রচার হোক। শুধু চা চাষিরা নন, যে এজেন্টরা পাতা কেনাবেচা করেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ সকলকেই সচেতন করা হোক।
ছোট চা চাষিদের সংগঠনের দাবি, ছোট বাগানগুলি সরাসরি চা তৈরির কারখানায় সবুজ পাতা বিক্রি করে না। এজেন্টদের মাধ্যমে বিক্রি করে। কাজেই কোন বাগানের পাতায় কীটনাশক রয়েছে, তা-ও চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সংগঠনের প্রস্তাব, চা গবেষণা কেন্দ্র এবং চা পর্ষদ এমন পরীক্ষাগারের ব্যবস্থা করুক, যেখানে কারখানায় সবুজ পাতা পরীক্ষা করে কীটনাশক রয়েছে কি না, তা যাচাই করা যায়। ছোট চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের (সিস্টা) সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের কাছে রাজ্য সরকার প্রস্তাব চেয়েছিল, কী ভাবে ছোট বাগানে কীটনাশকের বিধি চালু করা যায়। সে সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। সবুজ পাতার নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেই প্রক্রিয়াটি সহজ হয়ে যায়।”
উত্তরবঙ্গ তথা রাজ্যের মোট উৎপাদিত চা পাতার অর্ধেকের বেশি আসে ছোট চা বাগান থেকে। বড় চা বাগান কীটনাশক বিধি মেনে নিলেও, পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি ছোট চা বাগানে সে বিধি কী ভাবে মানা সম্ভব, তা নিয়েই প্রশ্ন। কারণ, ছোট চা চাষিদের আর্থিক সামর্থ্য বড় চা বাগানের ধারকাছে নয়। তাই নিষিদ্ধ সস্তার কীটনাশক ছেড়ে দামি বিকল্প কীটনাশক ব্যবহারও সম্ভব নয় বলে চা চাষিদের একাংশের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy