স্ট্রোকের ঝুঁকি কাদের বেশি? ছবি: সংগৃহীত।
দীপ্ত সরকারের বয়স ৩০। বিজ্ঞাপন সংস্থার কর্মী। মাস দু’য়েক আগে অফিস থেকে তাঁর বাড়িতে একটা ফোন আসে, জানানো হয় দীপ্তকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালে গিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজন জানতে পারেন, স্ট্রোক হয়েছিল দীপ্তর। এখনও তাঁর বাঁ দিকের হাতটি ঠিক মতো কাজ করছে না। হাঁটাচলাও প্রায় বন্ধ। শুধু দীপ্ত একাই নয়, এখন কমবয়সিদের মধ্যে স্ট্রোক হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
৪০-এর আশপাশে বয়স, এমনকি ৩০-এর কোটায় দাঁড়িয়ে আছেন, এমন অনেকেই এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এখন। কারও জীবনটাই শেষ হয়ে যাচ্ছে, কারও হয়তো কোনও অঙ্গ বিকল হয়ে ছিটকে যাচ্ছেন স্বাভাবিক জীবনের সড়ক থেকে।
স্ট্রোক বলতে আসলে বোঝায় সেরিব্রাল স্ট্রোক। মস্তিষ্কে যখন ঠিক মতো অক্সিজ়েন পৌঁছতে না পারে, তখনই স্ট্রোক হয়। মস্তিষ্কের সেরিব্রাম অংশে রক্তক্ষরণ হলে কিংবা রক্তবাহের মধ্যে ফ্যাট জমে থাকার কারণে যদি মস্তিষ্কে ঠিক মতো অক্সিজ়েন পৌঁছতে না পারে, তখনই স্ট্রোক হয়। সাধারণত, স্ট্রোক দু’ধরনের হয়। ইসকিমিক আর হেমারেজিক। ইসকিমিক স্ট্রোকে রক্ত চলাচল থেমে যায়। আর হেমারেজিক স্ট্রোকে দুর্বল রক্তনালী ছিঁড়ে গিয়ে রক্তপাত হয়।
যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। চিকিৎসক শুভম সাহা বলেন, ‘‘রক্তচাপ বেশি আছে, এমন রোগীদের কিন্তু এ বিষয়ে একটু বেশি সচেতন থাকতে হবে। দীর্ঘ দিন ধরে রক্তচাপে আক্রান্ত জেনেও চিকিৎসা না করানো, ঠিক মতো ওষুধ না খাওয়া, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা না করানো এই সব অভ্যাস কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়।’’
রক্তচাপ বেড়ে যায় রোজের নানা অনিয়মে। সেই সঙ্গে বেড়ে যায় স্ট্রোকের ঝুঁকিও। কোন কোন অভ্যাস এই ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে?
১. স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ৮০ শতাংশ কমাতে পারে স্ট্রোকের ঝুঁকি। অতিরিক্ত লবণ, চিনি ও স্নেহপদার্থ যুক্ত খাবার বাড়ায় স্ট্রোকের আশঙ্কা। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল ডেকে আনতে পারে বড় বিপদ। এই রোগের ঝুঁকি এড়াতে ‘জাঙ্ক ফুড’, বাইরের অতিরিক্ত মশলাদার ও খুব তেল দেওয়া খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, প্যাকেটজাত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ায় অভ্যস্ত হয়ে উঠতে হবে।
২. শরীরচর্চার অভাব ও সারা দিন শুয়ে-বসে থাকা ডেকে আনে এই রোগ। অলস জীবনযাপনে বাড়ে ওজন। এক জায়গায় দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ, শরীরচর্চা না করা ওবেসিটির সমস্যার অন্যতম কারণ। ওবেসিটি থেকেই স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে।
৩. ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাসও কিন্তু স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। তাই এই অভ্যাসে রাশ টানাটা ভীষণ জরুরি।
৪. বাড়িতে কারও উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকলে কিংবা স্ট্রোক হওয়ার ইতিহাস থাকলেও কিন্তু এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
একটা সময় ছিল যখন বয়স্করা বেশি স্ট্রোকে আক্রান্ত হতেন। সম্প্রতি অল্পবয়সিদের মধ্যে স্ট্রোক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে, এ কথা চিকিৎসকেরাও স্বীকার করছেন। কিন্তু কেন?
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চের একটি সমীক্ষায় এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে। এবং যে তথ্য আমাদের সামনে এসেছে, তা বেশ উদ্বিগ্ন করার মতো। অল্পবয়সিদের মধ্যে স্ট্রোক আর কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে আক্রান্ত হওয়ার পিছনে মোট তিনটি কারণ উঠে এসেছে এই সমীক্ষায়।’’
চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী যে কারণগুলির উল্লেখ করেছেন, তা হল—
১. নিয়মিত পার্টিতে গিয়ে অস্বাভাবিক হারে মদ্যপান করার প্রবণতা অর্থাৎ মদ্যপানে নিয়ন্ত্রণ না থাকা।
২. অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়া অভ্যাস ছিল, এমন ব্যক্তির হঠাৎ জিমে গিয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় শরীরচর্চা করা।
৩. কোভিড যাঁদের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে, তাঁদের মধ্যেও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়েছে।
সব মিলিয়ে স্ট্রোক থেকে বাঁচতে হলে কিন্তু জীবনযাত্রায় বদল আনতেই হবে। একটু সতর্ক হলেই কিন্তু আমরা এই রোগের ঝুঁকি অনেকটা কমিয়ে ফেলতে পারি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy