—প্রতীকী চিত্র।
কুলপি বিধানসভায় তৃণমূলের দাপট দীর্ঘ দিনের। দল গঠন হওয়ার পরে ২০০১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্রে জিতেছিলেন বর্তমান বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার। পরে ২০০৬ সালে অবশ্য তিনি হেরে যান। ২০১১ থেকে আবার তিনিই টানা জিতছেন এই কেন্দ্রে।
তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে এলাকায় দলের সংগঠন বেড়েছে। তবে গত কয়েক বছর ধরে পঞ্চায়েত স্তরে তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি এমনকী, বিধায়কের বিরুদ্ধেও মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে বলে অভিযোগ। সেই সঙ্গে মাথা চাড়া দিয়েছে দলের গোষ্ঠীকোন্দল। আর এই সুযোগ ক্রমশ শক্তি বাড়ায় বিজেপি, সিপিএম এবং আইএসএফ।
গত লোকসভা, বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দেয় বিজেপি। পঞ্চায়েতেও একাধিক জায়গায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল। তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, প্রায় ৩৫ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত ওই কেন্দ্রে বর্তমানে নেতৃত্বের অভাবে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। সব বুথভিত্তিক কমিটিও সে ভাবে তৈরি করতে পারেনি তারা। এর মধ্যে সিপিএম এবং আইএসএফের পালে বাতাস লেগেছে। এ বার মথুরাপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি, সিপিএম, আইএসএফ প্রার্থী দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, বিধায়কের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ ঘিরে দলীয় কর্মীদের একাংশই বীতশ্রদ্ধ। এক সময়ের চেনা মুখদের এখন বিধায়কের সঙ্গে দেখা যায় না। এমনকী, পঞ্চায়েত স্তরের অনেক নেতাও রাজনীতি থেকে সরে গিয়েছেন। জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, দুর্নীতির অভিযোগে সাধারণ মানুষের একাংশও বিচ্ছিন্ন হয়েছেন বলে অভিযোগ।
২০১৮ সালে পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র তোলা এবং জমা দেওয়া নিয়ে নানা ভাবে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল তৃণমূল। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে এক নির্দল প্রার্থীর হয়ে কাজ করা কর্মীকে খুন হতে হয়েছিল। শাসকদলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই খুন করে বলে অভিযোগ। সে কথা মানেনি তৃণমূল। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ছাপ্পা ভোট ও সন্ত্রাসের অভিযোগও ওঠে শাসকদলের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এর প্রভাব পড়তে পারে লোকসভা নির্বাচনে।
এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে মাঠে নেমে পড়েছে সিপিএম, আইএসএফ এবং বিজেপি। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, দুর্ব্যবহারের অভিযোগের পাশাপাশি এলাকায় রাস্তাঘাট, পানীয় জল, নিকাশি খাল সংস্কার-সহ নানা অনুন্নয়নের কথা তুলে ধরছে তারা।
কুলপি ব্লকের বাসিন্দা, আইএসএফের জেলা কমিটির সহ সম্পাদক বাহউদ্দিন মোল্লা বলেন, “গত পঞ্চায়েতে, বিধানসভা ভোটে সন্ত্রাস, ছাপ্পা হয়েছে। প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র তোলা বা জমা দিতে পারেননি। সেই ক্ষোভ মানুষের মধ্যে রয়েছে। তৃণমূল দুর্নীতিতে যুক্ত। ওদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মানুষ। রাজ্য সরকারের পাঠানো একশো দিনের টাকা নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে।”
মথুরাপুরের লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অশোক পুরকাইত বলেন, “প্রতিটি বুথে আমাদের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। গত নির্বাচনগুলিতে আমরা ভাল ফল করেছিলাম। তৃণমূল দলটায় সব চোর, তা মানুষ জেনে গিয়েছে। ফলে সামনের নির্বাচনে আমরা ভাল ফল করব।”
কুলপি ব্লকের সিপিএমের এরিয়া কমিটির সদস্য সুজন হালদার বলেন, ‘‘এই এলাকায় সিপিএমের পরিস্থিতি অনেক ভাল। পুরনোরা আবার দলে ফিরছে। ইতিমধ্যে প্রার্থীকে নিয়ে একাধিক পঞ্চায়েতে প্রচার করা হয়েছে। ভাল সাড়া মিলেছে।’’
বিরোধীদের সব অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার। তিনি বলেন, “আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠীকোন্দল নেই। সবই মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে। কোনও দুর্নীতিও করা হয়নি। মানুষকে পাশে নিয়ে আমরা রাজনীতি করি। এখানে সব ক্ষেত্রে উন্নয়ন হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy