—প্রতীকী ছবি।
জলবায়ু সঙ্কট যে প্রতি বছর গভীরতর হচ্ছে, তার সাম্প্রতিক ইঙ্গিত মিলেছিল শুষ্ক আবহাওয়ার আরব উপদ্বীপ অঞ্চলে অতিবৃষ্টির ঘটনায়। এ বার রাষ্ট্রপুঞ্জের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও)-র সদ্য প্রকাশিত এক রিপোর্টে জানা গেল, ২০২৩ সালে জলবায়ু, আবহাওয়া এবং জল-সংক্রান্ত বিপর্যয় গোটা বিশ্বে এশিয়ার চেয়ে বেশি আর কোনও অঞ্চলে ঘটেনি। তাপপ্রবাহ থেকে বন্যা, ঝড়ঝঞ্ঝা— পরিবেশ পরিবর্তনের কারণে এই ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় সংখ্যার বিচারে এবং তীব্রতার নিরিখে এ-যাবৎ বৃদ্ধি পেয়েছে গোটা বিশ্বেই। তবে সমস্যাটি সাম্প্রতিক কালে এশিয়ায় অনেক বেশি তীব্র, যে-হেতু গ্রিনহাউস গ্যাসের জেরে বিশ্ব গড়ের তুলনায় আরও দ্রুত তপ্ত হয়ে উঠছে এই অঞ্চলটি। এই সময়ে চিন, দক্ষিণ এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পড়ে প্রখর তাপপ্রবাহের কবলে, যা প্রভাবিত করে বিশ্ব জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে। ‘স্টেট অব দ্য ক্লাইমেট ইন এশিয়া’ নামক ডব্লিউএমও-র ওই রিপোর্টের পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর ৭৯টি জল-সংক্রান্ত বিপর্যয় ঘটে, যার সিংহভাগই ছিল বন্যা এবং ঝড়ের ঘটনা। এতে নব্বই লক্ষ মানুষ প্রভাবিত হন, মৃত্যু হয় দু’হাজারের বেশি। উষ্ণতা বাষ্পীভবন বৃদ্ধি করে, বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বাড়ে, যা অতিবৃষ্টিরূপে নেমে আসে বহু স্থানে। অন্য দিকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রাও রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছয় গত বছর। উষ্ণ সমুদ্র থেকে নিঃসৃত তাপ শক্তি বৃদ্ধি করে ক্রান্তীয় ঝড়ঝঞ্ঝার। বিশ্ব জুড়ে হিমবাহ গলে সমুদ্রে মিশে যত বাড়াচ্ছে সমুদ্রের জলস্তর, তত বৃদ্ধি পাচ্ছে উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলির প্লাবনের আশঙ্কা।
এই তথ্য ভারতের ক্ষেত্রে বিশেষ উদ্বেগের। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন সাবধানবাণী আজ ঘোর বাস্তব— শুধু উপকূল বা পাহাড় নয়, সমতলের মানুষও আজ প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় বিপন্ন। অথচ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সুস্থায়ী উন্নয়ন তথা সবুজ অর্থনীতির কথা এলেও সাম্প্রতিক কালের তাপপ্রবাহ, অতিবৃষ্টি এবং বন্যার সমস্যাগুলি নিয়ে কোনও আলোচনা হল না। নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ, হিমবাহের গলন কিংবা ক্রমবর্ধমান সামুদ্রিক জলস্তরের মতো পরিবেশ পরিবর্তনের নব্য সমস্যাগুলির কথা শোনা গেল না। কবে নেতারা বুঝবেন যে, এই উদীয়মান সমস্যাগুলির উপরে আশু নজর দেওয়া যেমন জরুরি, তেমনই এই সূত্রে বর্তমান নীতি এবং অভিযোজন কৌশলগুলিকেও ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
এই সূত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবং সম্প্রদায়গুলিকে প্রয়োজনীয় সম্পদ এবং নীতি নির্ধারণের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলায়। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলির উপরেই এই জলবায়ু পরিবর্তনের কু-প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে। তাই ধনী দেশগুলির থেকে আর্থিক সহায়তা অত্যাবশ্যক। এশিয়ারও নিজস্ব জ্বালানি নিরাপত্তা সংক্রান্ত চাহিদা রয়েছে, এবং এর সদস্য, বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলির চাহিদা অন্যদের থেকে আলাদা। ফলে, জলবায়ু পরিবর্তন রোখার লক্ষ্যের ক্ষেত্রে এদের সবাইকে এক গোত্রে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না। তবে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাম্প্রতিক রিপোর্টে স্পষ্ট যে, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে এ-যাবৎ যা কিছু প্রচেষ্টা, তার ফল সন্তোষজনক নয়। সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy